তিনদিনে ৫৪৩ জনের আপিল; শুনানি আজ
টাঙ্গাইল-৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী আব্দুল লতিফ মিয়া। মনোনয়পত্র পূরণ করার সময় বানানে ভুল হওয়ায় নিজের নাম ও আসন নম্বর ফ্লুইড দিয়ে মুছে শুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এতেই বাঁধে বিপত্তি। ফ্লুইড দিয়ে মুছে পরিবর্তনের কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের মনোনয়নপত্রটিও একই কারণে বাতিল করা হয়।
শুধু এই দুটি আসনেই নয়, এমন ঠুনকো কারণে বাতিল করা হয়েছে অনেক মনোনয়নপত্র। সেসব ভুল সংশোধনযোগ্য। গেল ১০ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সে সময় একটি পরিপত্র জারি করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল- ছোটখাটো ক্রুটির জন্য কোন মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। যদি বাছাইয়ের সময় এমন কোন ক্রুটি-বিচ্যুতি নজরে আসে যা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন সম্ভব, তা হলে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী দ্বারা তা সংশোধন করিয়ে নিতে হবে।
তবে, ইসির এই নির্দেশনা সত্বেও প্রার্থীর স্বাক্ষর নেই, টিপসই নেই, স্ট্যাম্প সংযোজন না করা, শিক্ষাগত যোগতার সনদ না দেয়া, আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়াসহ সামান্য কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এ বিষয়গুলোর আইনি ভিত্তি নিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এটি ঠিক হয়নি। ছোটখাটো ভুলের জন্য কারো মনোনয়নপত্র বাতিল না করে প্রার্থীকে ডেকে এনে সংশোধন করিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তারা কেন সেটি করতে পারেননি, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রার্থীরা আপিল করলে এসব কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত টিকবে না।
কর্মকর্তারা বলছেন, ইসি নির্দেশনা সঠিকভাবে না মানার কারণেই দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যেনতেন কারণে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিতদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। অন্যথায় ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হতো না। সে সময় নামের বানানের সামান্য ভুলের জন্যও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আপিলে সবার প্রতি মেরিট দেখে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। কোনো প্রকার পক্ষপাত করা হবে না।
এদিকে গেল ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি।
অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ৫৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন। এর মধ্যে বুধবার আপিলের শেষদিনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ারসহ ২২২টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। এর আগে প্রথম দিন ৩ ডিসেম্বর ৮৪টি এবং দ্বিতীয় দিন ৪ ডিসেম্বর ২৩৭টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। এসব আপিলের শুনানি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে।
এজন্য নির্বাচন ভবনের ১১ তলায় ট্রায়াল রুম তৈরি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। সকাল ১০টা থেকে শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। তারা জানান, শুনানিতে আপিলকারীরা তাদের আইনজীবী নিয়ে আসতে পারবেন। সেখানে আদালতের বেঞ্চের মতো করেই তারা মুভ করবেন। শুনানির প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ১ থেকে ১৬০, দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ১৬১ থেকে ৩১০ এবং তৃতীয় দিন শনিবার ৩১১ থেকে ৫৪৩ ক্রমিকের আপিলের শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর।