ভোট কেন্দ্রভিত্তিক ৪০ হাজার কমিটি করছে আ.লীগ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন শুরু করেছে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ জন নেতাকর্মী নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এভাবে সারাদেশে মোট ৪০ হাজার ১৯৯টি কমিটি গঠন করা হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশে যতগুলো ভোটার কেন্দ্র রয়েছে সেসব প্রতি কেন্দ্রের জন্য একটি করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এই কমিটির কাজ হবে নিদিষ্ট কেন্দ্রের ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করা। সরকারের উন্নয়ন-সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা। এ ছাড়া নাশকতা প্রতিরোধ ও ভোটকেন্দ্র সুরক্ষা করাও এ কমিটির দায়িত্ব।
দলীয় সূত্র জানায়, কমিটি গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা হলো ভোট কেন্দ্রভিত্তিক ও নির্বাচনী নাশকতা প্রতিরোধক এসব কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, জোটভুক্ত ১৪ দলের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, সমমনা জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, এলাকার মাতব্বর, পল্লী চিকিৎসক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ স্থান পাবে। কমিটিতে থাকা এসব ব্যক্তিকে নিয়ে ভোট প্রার্থনা ও সচেতনতামূলক সভা করবে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগ মুহূর্ত থেকে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও নাশকতা প্রতরোধে এ কমিটির সদস্যরা পাড়া-মহল্লায় টহল দেবে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন বা মহাজোটের যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা নিজ উদ্যোগে এ কমিটি গঠন করছেন। এখন প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাচ্ছে না। এ কারণে প্রার্থী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন কমিটি গঠন করছে। একই সঙ্গে কোন কমিটি কীভাবে কাজ করবে তারও নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নেতারা আওয়ামী লীগ তার অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে।
বগুড়া-৫ আসনের (ধুনট-শেরপুর) তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, এ আসনে মনোনয়র পাওয়া হাবিবুর রহমান কর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠক করছেন। এ ছাড়া চলছে কর্মীসভা। এই আসনে ২০০টি কেন্দ্র আছে। সে হিসাবে ২০০ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বলেন, সরকারের ১০ বছরের উন্নয়ন-সম্বলিত লিফলেট ছাপাতে দেয়া হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর কেন্দ্র সুরক্ষা কমিটি প্রতি বাড়ি বাড়ি যাবে ভোটের জন্য। তাদের কাছে এ লিফলেট পৌঁছে দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ৩০০ আসনের নির্বাচন পরিচালনা করে এই কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি। নির্বাচনী প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ, দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজটিও তারাই করেন। সে কারণে এ কমিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়া, যে কোনো নাশকতা প্রতিরোধ, ভোটারদের সুরক্ষার কাজও করবে এ ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি।’
সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। কুমিল্লা-৫ আসন থেকে নির্বাচন করছেন তিনি। তাকে ফোন করা হলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করছি। কেন্দ্র কমিটি গঠনসহ কোন কমিটি কী কাজ করবে তার নির্দেশনা দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত ঘরোয়া বৈঠক ও উঠান বৈঠক চলবে। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর নির্বাচনী জনসভা শুরু হবে।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এ-সম্পর্কিত একটি চিঠি তৃণমূলে পাঠায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। চিঠিতে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠন, ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন, পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ ও সদস্য সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।