পাটকেলঘাটায় শীতের শুরুতেই শুরু হয়ে গেছে কুমড়োর বড়ি তৈরির কাজ
পাটকেলঘাটায় শীতের শুরুতেই এবার আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে মাসকলাই ও কুমড়োর বড়ি তৈরিতে শত শত বউ, শাশুড়ি, মা, বোনেদের ব্যস্ততা। শীত মৌসুমের সময়ে মাস-কলাইয়ের ডালের আটা ও পাঁকা চাল কুমড়ো মিশিয়ে এ সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়। নতুন কলাই বাজারে আসার সাথে সাথে বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। এলাকার ৮০ ভাগ মহিলারা পালা করে বড়ি দেয়ার কাজটি করে থাকেন। এলাকার কৃষকরা শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মাস-কলাইয়ের আবাদ করে থাকে।
পাটকেলঘাটা সদরের হালিমা বেগম, সাহিদা আক্তার, নাসরিন সুলতানা, মোমেনা বেগম জানান, বড়ির প্রধান উপাদান ভাল জাতের মাসকলাই সংগ্রহ করে প্রথমে রোদে শুকিয়ে জাতাতে ভেঙ্গে ডালের মত করা হয় এবং ঐ ডালকে পানিতে ৫/৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ভালভাবে হাত দিয়ে চটের ছালায় ঘোষে ডালের খোসা ছড়ানো হয়, তারপর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে হয়। শুকানো ডাল আধা ভাঙ্গা আটায় পরিণত করা হয় এবং খুব সকালে অথবা বিকালে পাঁকা কুমড়োকে দু’ভাগ করে কেটে কুরানি দিয়ে চিকন করে নিয়ে কুমড়োর বিচি আলাদা করে নিতে হয়। ঐ কলাইয়ের আটা ও কুরানো কুমড়ো একটি পাত্রে মিশিয়ে দীর্ঘ সময় নাড়াচাড়া করতে হয়। মিশ্রণ ঠিকভাবে হয়েছে কি না তা দেখার জন্য মহিলারা মাঝে মাঝে বড়ির আকৃতি করে পানির পাত্রে ছেড়ে দিলে তা যদি ডুবে যায় তবে আরও ফেনাতে (নাড়াচাড়া করতে) হয়, আংশিক ভাসলে বড়ি তৈরি উপযোগী হয়েছে বলে তারা মনে করেন। ২/৩জন মহিলা সুতি মশারী কিংবা প্লাস্টিকের জাল দড়ির খাটের উপর বিছিয়ে দিয়ে এর উপর ঐ মিশ্রণ বড়ি আকৃতি করে লাইন করে দেয়া হয়। ৫/৬ দিন ভাল করে রোদে শুকাতে হয়। মেঘলা ও ঘন কুয়াশা থাকলে বড়ি গন্ধ ও লাল হয়ে যায় । সে গুলি সহজে সিদ্ধ হয় না। খেতেও ভাল লাগে না। ভালোভাবে শুকিয়ে মুখ আটানো পাত্রে সংরক্ষণ করলে ১২ থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত খাওয়া যায়। অনেক গৃহবধূরা মাসকলাইর সাথে পিয়াজ, পাঁকা লাউ, আলু, পেঁপে, কপিসহ নানা পদের সবজি মিশিয়ে বড়ি তৈরি করে থাকেন। আগে যে কলাই বড়ি দেয়ার জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যেত সে কলাই এখন ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কুমড়ো বিক্রি হচ্ছে ২০/২৫ টাকা কেজি এতে ১টি মাঝারি সাইজের কুমড়ো ১শত থেকে ১শ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঘরে তৈরি করা ডালের বড়ি রেডিমেড কেনা ডাল দিয়ে বড়ির চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু। বড়ির উপকরণের মূল্য বেশি হওয়ায় বড়ি তৈরিতে এখন খরচ অনেক বেশি হচ্ছে।
বড়ির সাথে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুণ, হাঁস, মুরগীর ডিম বেশ মজাদার খাবার। বড়িকে এককভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাইগুনি গ্রামের রোজিনা বেগম জানান, তিনি এবছর ১০ কেজি চালকুমড়ার বড়ি দিয়েছেন। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বিতরণ শেষে তিনি সারা বছর খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন। যে কোনো তরকারির সাথে এ বড়ি দিলে তরকারি খুব সুস্বাদু হয়ে থাকে। শহরের আত্মীয় স্বজনদের কাছে এর কদর সবচেয়ে বেশী।