নির্বাচনে আলোচিত সন্তানরা

বাংলাদেশে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নিয়ে অনেকের নানা রকম সমালোচনা রয়েছে। উত্তরাধিকারের রাজনীতি বিষয়ে অনেকেই নেতিবাচক কথাও বলেন। তারপরেও দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা, রাজনৈতিক পরিবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসা ব্যক্তিরাই বেশি জনমুখী হন, তাঁরাই বেশি জনগণের সেবা করেন, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং জনসম্পৃক্ততায়ও তাঁরাই বেশি এগিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দেখা যায়, যারা উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসেন তারা অনেক বেশি জন-বান্ধব হোন। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছেন বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্যে দিয়ে তিনি সপরিবারের নিহত হন। এরপর ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতিতে আসেন। তিনি রাজনীতিতে এসে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সুতরাং উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসার বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রের রাজনীতিতে দেখা যায়, যারা দেশের জন্য সততা ও আদর্শের সঙ্গে জনকল্যাণমুখী রাজনীতি করেছেন, তাঁদের উত্তরাধিকাররা যখন রাজনীতিতে আসেন, দেশের জনগণ তাদেরকে ইতিবাচক ভাবেই গ্রহণ করেন। আমাদের জাতীয় চার নেতার উত্তরাধিকারী যেমন ক্যাপ্টেন মনসুরের সন্তান মোহাম্মদ নাসিম, এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন, সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র ও কন্যা রাজনীতিতে কেবল স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিত নয়, তারা তাঁদের নিজেদের এলাকায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বিদায় নেওয়া রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র নাজমুল হাসান পাপন তিনি শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রেও অনেক প্রশংসিত।

উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসার বিষয়ে দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা  যতই সমালোচনা করুক না কেন, দেশের সাধারণ মানুষ মুখিয়ে থাকে ভালো সৎ এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদদের সন্তানরা যেন রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। এবারের নির্বাচনেও উত্তরাধিকার সূত্রে বেশ কয়েকজন তরুণ রাজনীতিতে এসেছেন, যাঁরা স্বচ্ছ রাজনীতিবিদদের স্বজন হিসেবে পরিচিত। তারা এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন এবং এই বিষয়টা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে অনেকেই মনে করেন।

নাহিম রাজ্জাকঃ আওয়ামী লীগের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জাতির পিতার সঙ্গে রাজনীতি করেছিলেন। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর নানা ঘাত প্রতিঘাতেও তিনি আওয়ামী লীগকে আগলে রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন মনে করা হতো আব্দুর রাজ্জাককে। তার পুত্র নাহিম রাজ্জাক রাজনীতিতে সক্রিয়। গতবারেই তিনি নির্বাচন এসেছিলেন, এবারের নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সৎ এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র নাহিম রাজ্জাকের রাজনীতিতে আসাকে অনেকেই ইতিবাচক ভাবছেন।

শেখ সারহান নাসের তন্ময়ঃ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত শেখ সারহান নাসের তন্ময়। শেখ হেলালের পুত্র তন্ময় এবারের নির্বাচনে বাগেরহাট ২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাকে নিয়ে ইতিমধ্যে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার রাজনীতিতে আসাটাকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকঃ বর্তমান রাষ্ট্রপতির সন্তান রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। তিনি গতবারের নির্বাচন করেছিলেন এবং এবারই  তিনি প্রথমবারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। আব্দুল হামিদ কিশোরগঞ্জ এলাকার অবিসংবাদিত নেতা। তারই পুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের রাজনীতিতে আসা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে স্থানীয় জনগণ।

কাজী নাবিল আহমেদঃ কাজী শাহেদ আহমেদ সরাসরি রাজনীতি না করলেও, তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে একজন মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন। তার খবরের কাগজ এবং আজকের কাগজ পত্রিকায় ১৯৭৫ সালের পর তিনিই প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। খবরের কাগজ এবং আজকের কাগজ পত্রিকায় মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনা প্রচার করেছেন। তিনি মনোনয়ন না পেলেও তাঁর ছেলে কাজী নাবিল আহমেদ যশোর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করছেন।

এই তরুণ এবং সুনাগরিকদের সন্তানদের রাজনীতিতে আসাটা দেশের মানুষ ইতিবাচক মনে করছে। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ও দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলেই আশা করা হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)