পাটকেলঘাটা বাসীর কাছে ধানের গোলা এখন শুধুই কল্প-কাহিনী

পাটকেলঘাটাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামঞ্চলের এক সময়ের সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা এখন বিলুপ্তের পথে। এক সময় সমাজের বসবাসরত মানুষের নেতৃত্ব নির্ভর করত কার বাড়িতে কতটি ধানের গোলা আছে এর হিসাব কষে। বিশেষ করে কন্যার বিয়ের সময় বর পক্ষের বাড়িতে ধানের গোলার খবর নিত কনে পক্ষের পিতা। যাহা এখন শুধুই কল্পকাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, এক সময় পাটকেলঘাটা সহ গ্রামঞ্চলে প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ চিরে চটা করে গোল আকৃতির তৈরি করা ধানের গোলা বাড়ির উঠানে উঁচু জায়গায় বসানো হতো। তার ছাউনি থাকতো গোল পাতা এবং টিন দিয়ে। গোলার মাথায় থাকতো টিনের তৈরি পিরামিড আকৃতির টাওয়ার। যা দেখা যেত অনেক দূর থেকে। ইঁদুর এবং বর্ষার পানি তা কোন ভাবেই স্পর্শ করতে পারতো না। মই বেয়ে গোলায় উঠে তাতে সকল প্রকার কৃষকের উৎপাদিত ফসল রাখতে হতো। এছাড়াও অনেকে ডোলা(ছোট গোলা) এবং আউড়ি তৈরি করে ঘরের ভিতর উঁচু মাচা করে তার উপর বসিয়ে তাদের ফসল রাখত। গ্রাম বাংলার সদৃশ গোলা, ডোলা এবং আউড়ি ছিল সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য। সে সময় কন্যার পিতা ভাবতো কন্যা পাত্রস্থ করতে যদি বরপক্ষের বাড়িতে ধানের গোলা থাকে তাহলে সে অনেক বড়লোক। তারা সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর ব্যক্তি। সেখানে মেয়েকে বিয়ে দিলে সে অনেক সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে। কিন্তু গোলা এখন আর দেখাই যায় না এবং তখনকার ব্যক্তিদের সেই চিন্তা-ভাবনা এখন আর করতে দেখা যায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার মানুষের চাল-চিত্র উলট-পালট করে দিয়েছে বলে সর্ব মহলের ধারণা।

বর্তমানে কন্যা পাত্রস্থ করতে পিতা ভাবে ছেলের চাকুরী কিংবা বড় ধরণের কোন ব্যবসা আছে কিনা। বিশেষ করে চাকুরীজীবি পাত্র হলে আর বলার কোন অপেক্ষা থাকে না। এক বাক্যেই কন্যার পিতা তার সাথে কন্যার বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায়। কথায় বলে- চাকরী হল বর্তমানে সোনার হরিণ।

পাটকেলঘাটা থানা সদর ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম বলেন (৭০) বলেন, আমার বাড়িতে দীর্ঘ ৫০বছর ধরে একটি গোলা আছে। তবে ধান রাখার কাজে তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। ফসল করতে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তাতে ধান বিক্রয় করে খরচ বাদ দিয়ে গোলায় উঠানোর মত ধান বাড়িতে থাকে না। কয়েক বছর পূর্বেও এলাকায় প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে একটি করে গোলা থাকতো। এখন গোলার প্রচলন প্রায় উঠে গেছে বললেও ভুল হবে না। সব কিছু মিলিয়ে গ্রাম বাংলার কৃষকের এক সময়ের সমৃদ্ধির প্রতীক গোলা, ডোলা এবং আউড়ি এখন শুধুই সকলের কাছে কল্পকাহিনীতে পরিণত হতে চলেছে বলে সকল মহলের ধারণা।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)