বরাদ্দের তিনগুন বেশি টাকা চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী:বিব্রত ইসি
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের পারিশ্রমিক হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। এর মধ্যে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম হলেও পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সম্ভ্যাব্য ব্যয়ের চিত্র দেখে রীতিমতো ভিমড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।
এই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা খাতে যেখানে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১২ কোটি টাকা, সেখানে পুলিশ বাহিনী নিজেদের জন্য চেয়েছে ৪২৪ কোটি টাকা। আর আনসার বাহিনীর চাহিদা ৪৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর চাহিদা এক হাজার কোটি টাকা। যেখানে ইসির মোট নির্বাচনী ব্যয়ই ধরা হয়েছে ৭০২ কোটি টাকা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের ‘বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ’ বিষয়ক বৈঠকে নিজেদের এমন চাহিদার কথা জানায় সংস্থাগুলো।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনসহ সবগুলো নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়। এবারও সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন বাহিনী যে চাহিদা ইসিকে দিয়েছে তা মোট নির্বাচনী বরাদ্দের চেয়েও তিনশ’ গুণ বেশি। কোনোভাবেই এই যোগান দেয়া সম্ভব নয় জানিয়ে বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনীকে যৌক্তিকতা বিবেচনায় সম্ভাব্য ব্যয়ের চাহিদা পুণরায় প্রেরণের জন্য বলেছে কমিশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বৈঠকে নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ চেয়েছে ৪২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতেই খরচ হবে ৭৬ কোটি টাকা। এ টাকা চেয়ে চাহিদা দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক চিঠিতে বলেছে, চলমান রাজনৈতিক ঘটনাবলি আসন্ন সংসদ নির্বাচন অতীতের তুলনায় অনেক বেশি ঘটনাবহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিবেচনায় ভোটের আগে ও পরে সাত দিন মাঠে থাকতে চায় পুলিশ।
অপরদিকে আনসার সদস্যরা চেয়েছেন প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। আর বিজিবি চেয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। এবার নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য কমবেশি ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা রয়েছে। অবশ্য ওই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ চাওয়া হয়নি।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে যে বরাদ্দ চাওয়া হয়, সাধারণত তাই দেয়া হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। সূত্র মতে, এবারো সেনাবাহিনী ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এর আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনেও তাদের একইভাবে মোতায়েন করেছিল ইসি।
যদিও ২০০৮ সালে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। ওই সময়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে তা বাতিল করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোট সাত দিন মাঠে থাকবেন। তারা ভোটের সাত দিন আগে অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর মাঠে নামবেন। ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর ও পরে আরো দুই দিন তারা মাঠে থাকবেন।
আর আনসার সদস্যরা ছয় দিন মাঠে থাকার প্রস্তাব করেছেন। যদিও আগের নির্বাচনের তারা পাঁচ দিন মাঠে ছিলেন। এবারের বাজেটে আনসার সদস্যদের জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর বরাদ্দের চেয়ে ২৪৩ কোটি টাকা বেশি চেয়েছে এ বাহিনীর কর্তৃপক্ষ। এর আগে পুলিশ চার দিন থাকলেও এবার সাত দিন থাকার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনের সময়ে থাকবেন চার দিন, মোতায়েনের আগে দুই দিন ও প্রত্যাগমনের জন্য একদিন। এই সাত দিনের জন্য ৪২৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে; যদিও এ বাহিনীর জন্য বরাদ্দ ১৫০ কোটি টাকার কিছু বেশি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচনে পুলিশের ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭ জন মোতায়েন থাকবেন। এর মধ্যে এসপি থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা ৩৪৯ জন রয়েছেন। নির্বাচনে কোস্টগার্ডের সদস্যরা কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। তারাও মাঠে ৭ দিন অবস্থান করতে চান। তবে এ বাহিনীর কতজন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন তা জানা যায়নি।
এদিকে এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রের পাহারায় নামানো হচ্ছে গ্রাম পুলিশ (দফাদার ও চৌকিদার)। তারা মাঠে থাকবেন দুই দিনের জন্য।