ঢালারচরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাহসী মাজেদা
পাবনা, রাজবাড়ি ও মানিকগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ঢালারচর। চরমপন্থী- সন্ত্রাসীদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলে টার্গেট হতে হয়। যেমন ২০০৭ সালে হাশামপুর গ্রামের শামসুর রহমানকে, ২০০২ সালে এলাকার প্রতিবাদী যুবক নূরুলকে, ২০০১ সালে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল মান্নানকে তারা খুন করে। ২০১০ সালে চরমপন্থীদের হাতে ৩ পুলিশ খুন হন।
গত এক দশকে এখানে পাঁচজন পুলিশসহ অর্ধ শতাধিক মানুষ চরমপন্থীদের হাতে খুন হয়েছেন। এই ঢালারচরের কথা শুনলে পাবনার মানুষ আঁৎকে আতকে ওঠে। সেখানে চরমপন্থীদের প্রতিবাদে রুখে দাড়িয়েছেন মাজেদা বেগম (৫৫) নামের এক সাহসী নারী। এজন্য তার উপর বহুবার হামলা নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। তার একান্ত প্রচেষ্টায় তাদের পরিবারের বেদখল হওয়া দু’ শতাধিক বিঘা সম্পত্তি দখলে আনতে পেরেছেন। অনেক বাধার মুখেও তার অনুদানে স্কুল- মাদ্রাসা, মসজিদ, রাস্তা হয়েছে। তার কাজই তাকে বানিয়েছে ঢালারচরের লড়াকু সৈনিক।
প্রতিবাদী ভূমিকা নেয়ায় এখানকার শাহাজ ও তার লোকজন মাজেদা বেগমকে টার্গেট করেছে। তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে এগিয়ে চলেছেন। ঢালারচরে বলতে গেলে যেখানে মানুষ দিনের বেলা যেতে ভয় পায় সেখানে তিনি অকুতোভয়। গ্রামে একটি টং ঘর বানিয়ে একাকী বসত করছেন। তিনি মাদার মাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা। তার ফাউন্ডেশনের অনেক প্রকল্প আজ সন্ত্রাসীদের কারণে বাধাগ্রস্থ। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শিশু শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনার জন্য এক বিঘা জমি দান করেছেন বলে জানালেন ইফা পাবনার উপ- পরিচালক। মসজিদ -মাদ্রাসার জন্য প্রায় দেড় বিঘা জমি দান করেছেন। শত হুমকির মুখে তিনি এলাকা ছাড়েননি। তবে তার কাজকর্মগুলো ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান।
মাজেদার পারিবারিক বিশাল জমি- জমাই যেন ‘যম’ হয়ে দাড়িয়েছে। তার সহায় সম্পত্তি ও সামাজিক কাজ করতে গিয়েই তিনি বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান। তিনি ধনাঢ্য ব্যক্তি মরহুম খবির উদ্দিন আহমেদ ওরফে খয়রাত গায়ান এর পুত্রবধূ। তার স্বামী এনএসআই এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহমেদ। তার ২ ছেলে-মেয়ে বৃটেনে থাকেন। ছোট ছেলে ঢাকায় পড়াশোনা করেন। তিনি স্বামীসহ দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকায় বসবাস করেন। মাজেদা বেগম জানান, তিনি বিভিন্ন সময়ে আদালতের আশ্রয় নেন। আদালত ৩৯ বিঘা সম্পত্তির ব্যাপারে ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং তা এখনো বহাল আছে। কিন্তু ঐ বাহিনী বিভিন্ন সময়ে ১৪৪ ধারা লংঘন করে ফসল লুট করে নিয়ে যায়। মাজেদা বেগম জানান, এই শাহাজ উদ্দিন তার ৫ বিঘা সম্পত্তি জবরদখল করে বাড়ি করে রয়েছে।
গত ২-২- ১৮ তারিখে তিনি পাবনার আমিনপুর থানায় শাহাজ ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন। এরপর ১০-০২-২০১৮ তারিখে ঢালারচর পুলিশ ফাড়িতে এ ব্যাপারে একটি শালিশী বৈঠক হয়। শালিসে তার পক্ষে রায় আসে। এরপর পুলিশের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শাহাজ উদ্দিন ও তার দলবল আদালতে ১৮-০৩-২০১৮ তারিখে মুচলেকা দিয়ে আসে। তারপরও এরা তার জমির ফসল কেটে নিয়ে তাকে মারধোর করে আহত করে। তিনি আহত হয়ে গত ২৪ মে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ বছরের ২৪ জুন তার ৪টি জায়গার উপর দখলদারিত্ব চালায় সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, তার ৪ একর জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেছে তারা। সর্বশেষ গত ৫ আগষ্ট তার জমির ধান কেটে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, তিনি গ্রামে এসে পারিবারিক জমি উদ্ধারে কাজ করছেন বলে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
তিনি সব হুমকি পদানত করে লড়ে যাচ্ছেন। সুবিচারের জন্য তিনি আইজিপি বরাবর আবেদন করেছেন। তিনি জীবনের নিরাপত্তা চান। আইনগত সহায়তা চান। আইন যেন নিজস্ব গতিতে চলে সে দাবি করেন।
ঢালারচর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর হাফিজ বলেন, ঢালারচর এলাকার জনগণ খুবই দরিদ্র ও নিরীহ। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এ চরটিকে নিরাপদ ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করে। তিনি অবশ্য দাবি করেন এলাকাটি এখন চরমপন্থী মুক্ত। তবে স্থানীয় জনসাধারন পুলিশের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে জানান, সাধারণ মানুষ চরমপন্থীদের ভয়ে ভীত। তারা জানান, চরমপন্থীরা পাশ্ববর্র্তী জেলা রাজবাড়ী থেকে এখানকার দুর্গম এলাকায় এসে আতœগোপন করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দুর্গম চরাঞ্চলে পৌঁছানোর আগেই চরমপন্থীরা সটকে পড়ে। স্থানীয় গডফাদাররা তাদের আশ্রয় দেন। চরের ফসলী জমিওয়ালাদের কাছ থেকে এবং নদীতে জেলেদের কাছ থেকেও চরমপন্থীরা চাঁদা আদায় করে।
আমিনপুর থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম বলেন, ঢালারচরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং নিয়ন্ত্রণে আছে। আমি নতুন এসেছি এখানে। মাজেদা বেগমের বিষয়টি দেখব।