আগ্রহী ৩২, দল চায় ১০…
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৩২ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে তারা দলের মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন। তবে দলটির পক্ষ থেকে মহাজোটের প্রার্থী হতে ১০ জনের নাম সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য রয়েছেন ছয়জন।
তবে শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বেশ কিছুদিন ধরে জানিয়ে আসছে যে, জোটের শরিকদের ৬৫ থেকে ৭০টি আসনে ছাড় দেয়া হবে। ‘উইনেবল ক্যান্ডিডেট’ না পাওয়া গেলে এ সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে পাঁচজনের মতো সদস্যকে মহাজোটের প্রার্থী করা হতে পারে। তবে প্রকৃত সংখ্যা কত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি সবকিছু যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেন, শরিকদের ৬৫ থেকে ৭০টির মতো আসন দেয়া হবে। তবে এর মধ্যেও আলাপ-আলোচনা ও জরিপ অনুযায়ী জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী বেশি হলে তাদের আরও বেশি আসন দেয়া হবে। আর কম থাকলে তাও বিবেচনা করা হবে।’
‘যেমন আমাদের মধ্যে যারা জয়ী হওয়ার মতো নয়, তাদের বাদ দিতে দ্বিধা করবো না। জরিপ অনুযায়ী যারা এগিয়ে আছেন তাদের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জোটগতভাবে যে সমীকরণ দাঁড়াবে সেখান থেকে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটা করতে ৪/৫ দিন সময় লাগবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রায় ঠিক করে ফেলা হয়েছে, এখন জোটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করা হবে।’
ওয়ার্কার্স পার্টি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার আশায় দল থেকে ৩২ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আগ্রহীদের কাছে প্রতিটি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে এক হাজার টাকায়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি থেকে ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা-৮ আসন থেকে রাশেদ খান মেনন, রাজশাহী-২ থেকে ফজলে হোসেন বাদশা, সাতক্ষীরা-১ থেকে অ্যাডভোকেট মুস্তাফা লুৎফুল্লা, নড়াইল-২ থেকে শেখ হাফিজুর রহমান, ঠাকুরগাঁও-৩ থেকে ইয়াসিন আলী এবং বরিশাল-৩ থেকে টিপু সুলতান।
এমপি হওয়া ওই ছয়জনকেই এবার মহাজোটের প্রার্থী করতে দলের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) থেকে ইকবাল কবির জাহিদ, কক্সবাজার-১ (চকোরিয়া-পেকুয়া) থেকে হাজি বশিরুল আলম, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) থেকে ইব্রাহীম খলিল এবং মেহেরপুর-২ (গাংনী-মেহেরপুর) থেকে নূর আহমদ বকুলকে মহাজোটের প্রার্থী করতে সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমাদের দল থেকে বর্তমানে ছয়জন সংসদ সদস্য আছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের-সহ দল থেকে ১০ জনকে মহাজোটের প্রার্থী করতে সুপারিশ করা হয়েছে।’
সুপারিশ অনুযায়ী সকলকে প্রার্থী করা না হলে কী করবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী নির্ধারণ হবে। আমরা যাদের নাম সুপারিশ করেছি তারা সবাই নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য। বর্তমানে আমাদের দল থেকে ছয়জন সংসদ সদস্য আছেন। এর কম প্রার্থী তো আমরা মানব না।’
তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে দাবি করেছে, এবারের নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন মহাজোটের প্রার্থী হতে পারবেন। নড়াইল-২ (লোহাগাড়া-নড়াইল) থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেবেন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা। সুতরাং এ আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ হাফিজুর রহমানকে মহাজোটের প্রার্থী করা হবে না, এটা নিশ্চিত।
এছাড়া বাকি যে পাঁচটি আসন ওয়ার্কার্স পার্টির দখলে সেখানে এক বা একাধিক মহাজোটের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এমন সংশয়ও রয়েছে। তবে দলের প্রধান দুই নেতা রাশেদ খান মেনন ও ফজলে হোসেন বাদশা মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন, এটি প্রায় নিশ্চিত।
এদিকে, সুপারিশ করা না হলেও ওয়ার্কার্স পার্টির আরও ২২ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে তারা দলীয় মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন- আমিনুল ইসলাম গোলাপ (গাইবান্ধা-৫), রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল (রাজশাহী-১), নজরুল ইসলাম (পাবনা-১), সিরাজুল ইসলাম শেখ (চুয়াডাঙ্গা-২), করম আলী (ঢাকা-১), আবু হানিফ (চট্টগ্রাম-৯), রবীন সরেন (দিনাজপুর-৬), ফিরোজ আলোম (পিরোজপুর-৩), আব্দুল মজিদ (গাজীপুর-১), মোস্তাফা আলমগীর রতন (ঝিনাইদহ-৪), আব্দুল হক (দিনাজপুর-১), আবুল হোসেন (ঝালকাঠি-১), জাকির হোসেন (পাবনা-৫), হিমাংশু সাহা (নারায়ণগঞ্জ-৪), গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী (টাঙ্গাইল-৭), মাসুকুল হক মুরাদ (টাঙ্গাইল-৭), আহসান উল্যাহ (কুমিল্লা-৮), জাকির হোসেন বাবুল (ময়মনসিংহ-৫), গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় (খুলনা-১), ইমরান হোসেন চৌধুরী (ঠাকুরগাঁও-১), মামুন আর রশিদ (চুয়াডাঙ্গা-১) এবং জহিরুল হক টুটুল (বরিশাল-২)।
যোগাযোগ করা হলে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হতে আগ্রহী মোস্তাফা আলমগীর রতন বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে দল থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছি। মহাজোট থেকে প্রার্থী করলে নির্বাচন করব। আর যদি প্রার্থী করা না হয়, সেক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে আমরা স্থানীয়ভাবে ওয়ার্কার্স পার্টিকে যথেষ্ট শক্তিশালী করেছি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করেছি। এবার যদি নির্বাচন নাও করি, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করব।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে শরিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টিকে ৪০টি, ১৪ দলের শরিকদের ২৩টি আর বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট, জাকের পার্টিসহ ছোট কয়েকটি দলকে পাঁচ থেকে সাতটি আসন দেয়া হতে পারে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির আবদার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ৬০টি আসন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৮টি আসন দেয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি আসন অর্থাৎ ৪০টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে জাতীয় পার্টির এমপি সংখ্যা ৩৪ জন। বাকি শরিকদের ১৫ জন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির ছয়জন, জাসদ দুই অংশের পাঁচজন, তরিকত ফেডারেশনের দুজন এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) দুজন এমপি রয়েছেন। জোটের বাইরে নির্বাচন করে নিজ নিজ প্রতীকে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনজন ও জাসদের একজন এমপি হন।