শেষ পর্যন্ত ভোট করতে পারবেন না খালেদা -তারেক
তিনটি মনোনয়নপত্র কেনা হয়েছে কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে। যদিও তিনি প্রার্থী হিসেবে যোগ্য হবেন কি না, তা এক বড় প্রশ্ন হিসেবে ঝুলে আছে। দুটি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া দণ্ডিত হওয়ায় নির্বাচনে তাঁর অংশগ্রহণ নিয়ে খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতিমধ্যেই কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন ২ বছরের বেশী দন্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে রায় স্থগিত করে না আসতে পারলে নির্বাচনের যোগ্য হবেন না। এতে করে স্পষ্ট হয়ে গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কিংবা তার ছেলে তারেক রহমান আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। এই সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার পক্ষে সাজা স্থগিত চেয়ে নিয়মিত আপিল করার সুযোগ নেই। তবে আপিল বিভাগের ১৯৯৬ সালের রায়ের আলোকে বলা যায়, দুটি মামলায় তাঁর দণ্ড সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে যোগ্য ঘোষণা করার এখতিয়ার রাখে।
আপিল বিভাগের এই রায়টি নিয়ে অবশ্য খুব আলোচনা হয়নি। দুই বছরের বেশি কারও দণ্ড এবং আপিলে তার কার্যকারিতা স্থগিত না হওয়া মানেই নির্বাচনে অযোগ্য—সাধারণভাবে এর প্রচারটিই বেশি। এখন মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ তারিখের মধ্যে রায় না পাওয়ার সুবিধা রিটার্নিং কর্মকর্তার বা ইসি নিতে পারে। কারণ, সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ মতে, ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হলেই চলবে না, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণ ‘নৈতিক স্খলনজনিত’ হতে হবে। সার্টিফায়েড কপি না পাওয়া পর্যন্ত ইসি আইনগতভাবে অনুমান করতে পারে না যে বিএনপির চেয়ারপারসন ‘নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে’ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন কি না। এখানে নৈতিক স্খলন ব্যাপক অর্থে নয়, কিছু সুনির্দিষ্ট মাপকাঠিতে বিবেচনা করতে হবে। ২০০১ সালে আপিল বিভাগ এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কার্যত তিনটি মাপকাঠি ঠিক করে দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে প্রথমত, তিনি দণ্ডিত হওয়ায় সাধারণভাবে বিবেক বা সমাজ আঘাত পেয়েছে কি না? দ্বিতীয়ত, আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই তিনি কুয়েতের নেতার অনুদানটি গ্রহণ করেছিলেন কি না? তৃতীয়ত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সমাজের চোখে নীতিবিবর্জিত (ম্যান অব ডিপ্রেব ক্যারেক্টার) হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন কি না কিংবা সমাজ তাঁকে খাটো করে দেখে (লুকড ডাউন) কি না। এসবের উত্তর হ্যাঁ হলেই শুধু মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে। কিন্তু এখানে বড় প্রশ্ন হলো, তিন আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা কীভাবে তা যাচাই করবেন, কারণ তাঁর হাতে রায় থাকবে না।
১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার বহু পরে সংসদের শেষ বছরে ২০০০ সালে এরশাদ সাংসদ পদ হারান। দণ্ডিত অবস্থায় ২০০৮ সালে মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংসদ হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন, এরপর তিনি সাংসদ পদ হারান। আইন ও বিচারমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে পারবেন কি পারবেন না, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের দুটি রায় আছে। রায় অনুযায়ী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশন।
এখন নির্বাচন কমিশন বলছে, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।
ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়ার আইনি লড়াইটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।