কলারোয়ায় বছরে ২০ লাখ টাকার ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন
কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রচলনের শুরু থেকে কলারোয়ার জমিতে বছরে ৩/৪ টি ফসল উৎপাদন করা হয়। সংগে সাথী ফসলও থাকে। ক্রমান্বয়ে বছরে ৩/৪ টি ফসল উৎপাদন এবং বেশী পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরা শক্তি ক্রমান্বয়ে সর্বনিন্ম পর্যায়ে এসে পৌছায়। এতে জমি প্রায় জৈব পদার্থ শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে ফসল উৎপাদন হ্রাসের সংগে সংগে ফসলে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের প্রার্দূভাব দেখা দিচ্ছে। কিন্তু কৃষক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রোগ বালাই থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কৃষক ক্রমান্বয়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বৃদ্ধি করছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও ফসল উৎপাদন কোন ভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে না। বরং রোগ বালাই কৃষকের নিত্য সঙ্গী হয়ে পড়ছে। এতে প্রচ- পরিশ্রমী কৃষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এরকম বিপর্যস্থ কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় মো: মহাসীন আলী নামে এক কৃষি কর্মকর্তা কলারোয়ায় যোগদান করেন। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সমগ্র কলারোয়ার গ্রামগঞ্জের কৃষকদের সংগে কথা বলে প্রকৃত বিষয় অনুধাবন করেন। এরপর মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবেশ বান্ধব ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন ও ব্যবহার সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করণ বিষয়ের উপর ইনোভেশনের আওতায় জৈব সার উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
কৃষি কর্মকর্তা মো: মহাসীন আলী জানান, কলারোয়ায় এসে দেখেন উত্তোরণ এনজিও এর সহায়তায় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাত্র ১০ টি ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে এবং বার্ষিক ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ১.৫ টন। তাই তিনি ইনোভেশনের আওতায় বিগত ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে সাতক্ষীরা সদরের নেবাখালী থেকে ১ হাজার ২’শ টাকা কেজি দরে দেড় কেজি কেঁচো এনে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের আঙ্গিনায় ১১টি চাড়ি বা নান্দায় ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদনের সুত্রপাত ঘটান। ৬০ দিন পরে ক্ষুদ্র আকারের এই ডিপো থেকে প্রথম পর্যায়ে ৪০ জন কৃষককে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদনে বিনা মূল্যে অর্ধ কেজি করে কেঁচো সরবরাহ শুরু করেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এই ৪০ জন কৃষক ও উপজেলা সদর ডিপো থেকে বিনা মূল্যে কেঁচো সরবরাহ করে বর্তমানে ৮৫০ টি ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। জুন’১৮ এসে ভার্মি কম্পোষ্টের সংখ্যা ৮৫০ টি উন্নীত হয়েছে। এতে বর্তমানে বার্ষিক ১৭০ টন ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদিত হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। এতে রাসায়নিক সার বাবদ বছরে প্রায় ৬ লাখ টাকার অধিক সাশ্রায় হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কৃষি কর্মকর্তা মো: মহাসীন আলী আরো জানান, গোবর আঙ্গিনায় রেখে ২৫/৩০ দিন নাড়াচাড়া করে গন্ধমুক্ত করা হয়। কারণ দূর্গন্ধযুক্ত পচা গোবরের মধ্যে কেঁচো মারা যায়। এরপর চাড়ি বা নান্দায় দূর্গন্ধ মুক্ত গোবর ভরে তার ভিতর কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। কেঁচো এই গোবর খেয়ে বিষ্ঠা ত্যাগ করে। কেঁচোর এই বিষ্ঠাই ভার্মি কম্পোষ্ট সার। এই সার কৃষকরা নিজের ফসলে ব্যবহার ছাড়াও প্রতিবেশী কৃষককে উপহার দিচ্ছে এবং সীমিত আকারে ভার্মি কম্পোষ্ট সার বেচাকেনা শুরু হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক কলারোয়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইউনূছ আলী জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মহাসীন আলীর উৎসাহে ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে প্রতি মাসে তার ৪ টি চাড়ি বা নান্দা থেকে বার্ষিক প্রায় ১ টন ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন হয়। এই ভার্মি কম্পোষ্ট সার তার ধান, পাট এবং তরিতরকারি চাষে ব্যবহার করায় উৎপাদন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় কম পক্ষে ২০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার রাসায়নিক সার খরচ একতৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষ করে ফসলে রোগের প্রার্দূভাব না থাকায় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির সংগে সংগে উৎপাদন খরচ হ্রাস পেয়েছে। ফলে তারা বেশী লাভবান হচ্ছে। এসব দেখে পার্শ্ববর্তী কৃষকরা তাদের থেকে ভার্মি কম্পোষ্ট সার কিনে সীমিত আকারে ব্যবহার শুরু করেছে। সাফল্য দেখে অনেকে কৃষক ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন শুরু করছে।