আমাদের মহাশূন্য কতটা বড়?
খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সাল পর্যন্ত আমরা মনে করতাম আমাদের পৃথিবী গোলাকার নয় সমতল। ১৬০০ শতাব্দি পর্যন্ত আমরা মনে করতাম যে পৃথিবী আমাদের সৌরমণ্ডলের কেন্দ্র কিন্তু এখন আমরা সৌরমন্ডল আর ব্রহ্মাণ্ড নিয়ে অনেক কিছু জেনেছি। আমাদের সূর্য আমাদের সৌরমণ্ডলের কেন্দ্র আর আমাদের সৌরমালার গ্রহ সূর্যের পরিক্রমা করে থাকে। কিন্তু আমাদের ব্রহ্মাণ্ড কতটা বড়? এটার কি কোনো শেষ আছে? আমরা কি সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডকে ভ্রমণ করতে পারবো? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে তার জন্য কতটা সময় লাগবে? ডেইলি বাংলাদেশের আজকের আয়োজনের মাধ্যমে আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো যে, আমাদের ব্রহ্মাণ্ড আসলে কতটা বড়।
তাহলে আমাদের পৃথিবীকে দিয়ে শুরু করি। আমাদের পৃথিবী আমাদের সৌরমণ্ডলের একটি অংশ যেখানে সূর্য কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এরকম বিলিয়ন সৌরমণ্ডল মিলে আমাদের আকাশগঙ্গা হয়েছে। আমাদের আকাশগঙ্গার নাম মিল্কিওয়ে। শুধু আমাদের মিল্কিওয়ে আকাশগঙ্গাতেই সূর্যের মত ১০০ বিলিয়ন তারা আছে, যার মধ্যে বেশকিছু তারা সূর্যের থেকেও কয়েকগুণ বড় আর হুব্বল টেলিস্কোপ থেকে জানা যায় এরকম একশো বিলিয়ন আকাশগঙ্গা আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে আছে। কিন্তু বিজ্ঞানের হিসেব অনুযায়ী এর সংখ্যা দুইশ বিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে। এর মানে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে ১০০ বিলিয়ন গুণ ১০০ বিলিয়ন তারা হতে পারে।
যাই হোক এটার সংখ্যা এতটাই বিশাল যে সঠিকভাবে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডকে আমরা ধারণা করতে পারছি না। এর জন্য এটাকে বোঝার জন্য একটি সাধারন উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, আমাদের পৃথিবীতে প্রত্যেকটি সমুদ্রের তীরে বালুর কণার সংখ্যা যত প্রায় তত সংখক তারা আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডে আছে। আমরা যেমন সমুদ্রে গিয়ে বালু কণা সংখ্যা গণনা করতে পারব না তেমনি ব্রহ্মাণ্ডে তারার সঠিক সংখ্যা বের করা সম্ভব নয়।
এটা থেকে বোঝা যায় আমাদের ব্রহ্মাণ্ড কতটা বড়। যেমন আপনি জানেন ব্রহ্মাণ্ডের দুটি স্থানের দূরত্ব লাইট ইয়ারস বা আলোকবর্ষের হিসেবে পরিমাপ করা হয়ে থাকে। এক আলোকবর্ষ মানে সূর্যের কিরণ এক বছরে যতটা পথ অতিক্রম করে। আর আলো প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় চোদ্দ দশমিক নয় কোটি কিলোমিটার পথ। সূর্যের আলোকে এই পথ অতিক্রম করে পৃথিবীতে আসতে আট মিনিট বিশ সেকেন্ড সময় লাগে। এর মানে এক আলোকবর্ষ বেশ লম্বা একটি দূরত্ব।
আমরা আমাদের ব্রহ্মাণ্ডকে জানার জন্য দুইভাবে দেখতে পারি। প্রথমটি হল পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব। পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে আমরা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে দেখতে পারি। তবে জেনে নেই আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব কতটা বড়। মনে করি এটা আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব। এখানে আমরা আমাদের পৃথিবীকে কেন্দ্র ভাবি এবং এখান থেকে আমরা ব্রহ্মাণ্ডের চারদিকে দেখছি। আমাদের পৃথিবি আমাদের সৌরমণ্ডলের অংশ। আর এরকম অনেক সৌরমন্ডল আমাদের আকাশগঙ্গাতে আছে। আমরা এই সোলার ইন্টারস্টেলার লেবার কোট এর মাত্র ছোট একটি অংশ। আর এ রকম সৌরমণ্ডল মিলে আমাদের মিল্কিওয়ে আকাশগঙ্গা হয়েছে। এটার মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন সৌরমণ্ডল আছে।
আমাদের আকাশগঙ্গা আমাদের লোকাল গ্যালাকটিক গ্রুপের অংশ, যা কোটি কোটি আকাশগঙ্গা মিলে তৈরি হয়েছে। আর যা ভার্গ সুপার ক্লাস্টার এর অংশ। ভার্গ সুপার ক্লাস্টার-এ বেশ কয়েকটি আকাশগঙ্গা আছে। আর এটা ব্রহ্মাণ্ডের লোকাল সুপার ক্লাস্টারের অংশ। এই ক্লাস্টারে কোটি কোটি তারা এবং কোটি কোটি গ্রহ আছে। যা তারার পরিক্রমা করছে। এই লোকাল সুপার ক্লাস্টার আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব এর একটি ছোট্ট অংশ। এটাই ছিল আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব।
এবার দেখা যাক সমগ্র মহাবিশ্ব। এর মানে সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড। এর মধ্যে যে অংশ আমরা দেখতে পারি সেটা আসবে, আর যে অংশ আমরা দেখতে পাই না সেটিও আসবে। যেমন আমরা জানি আমাদের ব্রহ্মাণ্ড ১৩.৮ বছর পুরাতন। আমাদের কাছে সূর্যের আলো পৌঁছালে আমরা যে কোনো জিনিস দেখতে পাই। এর মানে আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব যেদিকে দেখি না কেন খুব বেশি হলে ১৩.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্তই দেখতে পাব। এর মানে আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব এর ডায়ামিটার প্রায় ২৭ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত। কিন্তু এটা সঠিক নয় কারণ আমাদের ব্রহ্মাণ্ড সবসময়ই বড় হচ্ছে। এর জন্য ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগের তারার আলো আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের বড় হওয়ায় গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই হিসেবে আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব এর ডায়ামিটার প্রায় ৯৩ বিলিয়ন লাইট ইয়ারস বা আলোকবর্ষ হবে। এমনটাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন। তাহলে বোঝা যায় যে, আমরা সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডকে দেখতে পারব না। কারণ ওই খান থেকে আলো আমাদের কাছে এখনো এসে পৌঁছায়নি। এর মানে আমরা পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব কখনই এর আগে দেখতে পারবো না। কিন্তু আমরা কি কখনও এর আগে দেখতে পারবো? এর জন্য আমাদের কি করতে হবে?
আমাদের ব্রহ্মাণ্ড যত ধীরে ধীরে পুরনো হবে আমাদের কাছে আলোর কিরণ যেটা ১৩.৮ আলোকবর্ষের থেকেও দূরে আছে সেগুলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে থাকবে। আর আমরা অদেখা ব্রহ্মাণ্ডের আরো অনেক কিছু দেখতে পাব। এর মানে আমাদের শুধু সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। আপনাদের মনেও নিশ্চয় এমন প্রশ্নই আসছে। তাহলে আমরা বিজ্ঞানের ভরসাতেই থাকি দেখা যাক তারা আমাদের কি সংবাদ দেয়।
সূত্র:ডেইলি বাংলাদেশ