দেবহাটায় শালিসের নামে স্বর্ণের দুল খুলে নিলো ইউপি সদস্য সহ শালিসদাররা
দেবহাটার পারুলিয়া নিশ্চিন্তপুর গ্রামে পাওনা টাকা চাইতে যাওয়ায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক যুবককে অবৈধ সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে খুটির সাথে রশি দিয়ে বেঁধে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। পরে ১০হাজার টাকা জামানত হিসাবে যুবকের মামির কানের স্বর্ণের দুল খুলে নিলো ইউপি সদস্য সহ শালিসদাররা। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত ১১টার দিকে পারুলিয়া ইউনিয়নের নিশিচিন্তপুর গ্রামে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পারুলিয়া ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামে আব্দুলের পুত্র সাহাজুল ইসলাম (সাজু) কয়েক মাস পূর্বে প্রতিবেশী স্বামী পরিত্যক্তা সুফিয়া বেগম (৫৫) নামের এক অসহায় মহিলা অসুস্থ হওয়ায় তাকে ২হাজার টাকা ধার দেন। শনিবার রাতে সাহাজুল ইসলাম উক্ত ধারের টাকা আনতে গেলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিত ভাবে স্থানীয় কাজেম হাজী, বাবর আলীর পুত্র রবিউল ইসলাম ও তার ভাই এবাদুল ইসলাম সহ কয়েকজন মিথ্যা অপবাদে তাকে আটক করে এবং অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে বাঁশের খুটিতে বেঁধে ছবি তুলে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সাহাজুল ইসলামকে মারপিট করে। এসময় স্থানীয়রা ও ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ঘটনা স্থলে উপস্থিত হলে তারা সাহাজুল ইসলামের কাছে মিমসার নামে ৫০হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তখন অসহায় পরিবারটি ৫০হাজার টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে ১০হাজার টাকা আনতে বলে। এসময় সাহাজুলের পরিবারের সদস্যরা টাকা দেওয়ার জন্য একদিন সময় চাইলে স্থানীয় বিচারক কাজেম হাজী, বাবর আলীর পুত্র রবিউল ইসলাম ও তার ভাই এবাদুল ইসলাম সহ কয়েকজন ব্যক্তি ১০হাজার টাকা এখনই দিতে হবে বলে জানায়। ঐ মুহূর্তে ১০হাজার টাকা দিতে না পারায় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বন্ধকের নামে সাহাজুলের মামির কাছ থেকে কানের স্বর্ণের দুল খুলে নিয়েছে বলে জানান অসহায় পরিবারটি। এবিষয়ে সাহাজুল ইসলামের মা বলেন, কয়েক মাস পূর্বে আমার ছেলের কাছ থেকে প্রতিবেশী স্বামী পরিত্যক্তা সুফিয়া বেগম অসুস্থ হওয়ার কারণে ২হাজার টাকা ধার নেয়। শনিবার রাতে আমার ছেলে ধারের টাকা আনতে গেলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিত ভাবে অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে আটকিয়ে রেখে ছবি তুলে পত্রিকায় দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রথমে ৫০হাজার টাকা দাবি করে। পরে আমরা অপরাগতা স্বীকার করলে একপর্যায়ে ১০হাজার টাকা দাবি করে। এসময় আমরা টাকা দেওয়ার জন্য একদিন সময় চাইলে স্থানীয় বিচারক কাজেম হাজি, বাবর আলীর পুত্র রবিউল ইসলাম ও তার ভাই এবাদুল ইসলাম সহ কয়েকজন ব্যক্তি ১০হাজার টাকা সাথে সাথেই দিতে বলে। আমরা ১০হাজার টাকা দিতে না পারায় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বন্ধকের নামে আমার ভাবির কাছ থেকে কানের স্বর্ণের দুল খুলে নেয়। এঘটনায় সুফিয়া বেগম বলেন, আমি অসুস্থ হওয়ায় আমার প্রতিবেশী সাহাজুল ইসলামের কাছ থেকে ২হাজার টাকা ধার নেই। শনিবার রাতে সাহাজুল আমার বাড়িতে টাকা নিতে আসলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার বাড়িতে সাহাজুলকে আটকে রাখে এবং বেধে মারপিট করে। সাহাজুল আমার সন্তানের সমতুল্য, তাই আমি তাকে সন্তানের মত দেখি। কিন্তু এলাকার কিছু ব্যক্তি আমাকে মিথ্যা অপবাদের জন্য আমাকে সহ সাহাজুলকে খুটির সাথে বেধে রাখে। পরে সাহজুলের কাছ থেকে ১০ হাজার দেওয়ার চুক্তিতে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সুফিয়ার বাড়ি থেকে সাহাজুলকে আটক করেছি। সেখানে গ্রামের বহু লোক ছিল। তবে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা-পয়সা বা স্বর্ণের দুল নেওয়া হয়নি। আর আমি শেষ পর্যন্ত না থাকায় বিস্তারিত কাজেম ভাই ও সিরাজুল মেম্বরের কাছে শোনেন বলতে পারবে। এবিষয়ে ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন বিচার শালিস করিনি। আমি সোনা-দানার বিষয়ে কিছুই জানিনা। আপনারা আমার বিরুদ্ধে যা পারেন লেখেন, তাতে আমার কিছু জায় আসে না। এঘটনার বিচারক কাজেম হাজীর কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এমন ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল, আমরা রাতেই মিমাংসা করে দিয়েছি। তবে এসব কথাতো আর মোবাইলে বলা যায় না, সরাসরি দেখা করেন সব কিছু বলবো। এমন নেক্কার জনক ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবারটি।