এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতল টাইগাররা
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ২৪৭ রানের লক্ষ্য দেয় স্বাগতীকদের। টাইগাররা হেসে খেলে ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল মাশরাফি বাহিনী।
বুধবার জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামে টাইগাররা। ৪৪.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টিম টাইগার।
ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সাথী হয় আগের ম্যাচের হিরো ইমরুল কায়েস। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে এক বিপদ কেটে যায় লিটন দাসের উপর থেকে। জার্ভিসের বলে এলবি ডাবলিউ হয় লিটন। আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। কিন্তু লিটন দাস সতীর্থ ইমরুলের সাথে আলোচনা করে রিভিউ নেন। আর এতেই কেটে যায় বিপদ।
এরপর যেন জ্বলে ওঠে লিটন দাস। তুলে নিলেন দারুণ এক ফিফটি। ৪২ থেকে শেন উইলিয়ামসের বলে দুই রান নিয়ে ৪৪। পরের বলে চার মেরে ৪৮। পরের বলে আরেকটি বাউন্ডারিতে ছুঁয়ে ফেলেন মাইলফলক। ৪৬ বলে ফিফটি করতে ৮ চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন লিটন।
ওদিকে ইমরুল ও কম যান না। তিনি ও তুলে নিয়েছেন ওডিআই ক্যারিয়ারের ১৬ তম হাফ সেঞ্চুরি। লিটন-ইমরুলের পার্টনারশিপে নতুন ওপেনিং রেকর্ড করল বাংলাদেশ।
রেকর্ড করেই ফিরলেন লিটন দাস। সিকান্দার রাজার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৮৩ রানে ঘরে ফিরে যান লিটন। লিটনের পর মাঠে নামলেন গত ম্যাচের বিবর্ণ রাব্বী। এ ম্যাচেও হতাশ করে ০ রানে ঘরে ফিরলেন রাব্বী। এরপর ৯০ রানে ফিরে যান ইমুরুল কায়েস। তারপইর আর পিছে ফিরতে হয়নি টাইগারদের। মুশফিকুর রহিম (৪০) ও মোহম্মাদ মিঠুন (২৪) রানে অপরাজিত থেকে সিরিজ নিশ্চিত করে ফিরে যান।
ওদিকে শুরুতেই জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে উইকেটরক্ষ মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে হ্যামিলটন মাসাকাদজাকে ফেরান তিনি। মাসাকাদজা করেছেন ১৪ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে সাইফউদ্দিনের এটি দ্বিতীয় শিকার।
সাইফের পর জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন মিরাজ। কেপাস জুয়াওকে ২০ রানে ঘরে ফেরান তিনি। এরপর দলের হাল ধরেন ব্রেন্ডন টেইলর (৪৪) শেন উইলিয়ামস(১৬)।
জিম্বাবুয়ের রানটা দ্রুতই এগিয়ে নিচ্ছিলেন ব্রেন্ডন টেইলর ও শন উইলিয়ামস। এই জুটি ভাঙাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের সামনে। ‘ভয়ঙ্কর’ এই জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই উইকেটের দেখা পান তিনি।
মিরাজের পড়ে মাহমুদউল্লাহর স্বীকার হন টেইলর। প্রথম ওভারেই এলবি ডাব্লিউতে টেইলরকে ৭৫ রানে থামিয়ে দলে স্বস্তি আনেন রিয়াদ।
আবারো জিম্বাবুয়ের শিবিরে আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। সে মুশফিকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ঘরে ফেরান শেন উইলিয়ামসকে (৪৭)।
জিম্বাবুয়ের দলীয় রান যখন ২২৯ তখন উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সিকান্দার রাজাকে ফেরান মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফেরার আগে সিকান্দার রাজা করেন ৪৯ রান। এরপর ৪৭তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন পিটার মুর। ৪৮তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে নাজমুল ইসলাম অপুর হাতে ক্যাচ হন এলটন চিগুম্বুরা।
জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আজ উজ্জ্বল ছিলেন ব্রেন্ডন টেইলর। ৭৩ বল খেলে ৭৫ রান করেন তিনি। ওয়ানডেতে এটি তার ৩৫তম অর্ধশত। অন্যদের মধ্যে সিকান্দার রাজা ৪৯ ও শন উইলিয়ামস ৪৭ রান করেন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা ১টি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ১টি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৩টি ও মোস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
গত ২১ অক্টোবর তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ২৮ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ উইকেটে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করল টাইগাররা।
ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ১২ ম্যাচের ১২টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ৭ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ে ইনিংস: ২৪৬/৭ (৫০ ওভার)
(হ্যামিলটন মাসাকাদজা ১৪, চেফাস ঝুয়াও ২০, ব্রেন্ডন টেইলর ৭৫, শন উইলিয়ামস ৪৭, সিকান্দার রাজা ৪৯, পিটার মুর ১৭, এলটন চিগুম্বুরা ৩, ব্রান্ডন মাভুতা ৯*, ডোনাল্ড তিরিপানো ৩*; মাশরাফি বিন মর্তুজা ১/৪৯, মোস্তাফিজুর রহমান ১/৩৫, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৩/৪৫, মেহেদী হাসান মিরাজ ১/৪৫, নাজমুল ইসলাম অপু ০/৪৩, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১/২১)।
বাংলাদেশ ইনিংস: ২৫০/৩ (৪৪.১ ওভার)
(লিটন দাস ৮৫, ইমরুল কায়েস ৯০, ফজলে মাহমুদ রাব্বী ০, মুশফিকুর রহিম ৪০*, মোহাম্মদ মিঠুন ২৪*; কাইল জারভিস ০/৩১, টেন্ডাই সাতারা ০/৪৮, ডোনাল্ড তিরিপানো ০/২২, ব্রান্ডন মাভুতা ০/৫৬, শন উইলিয়ামস ০/৪৩, সিকান্দার রাজা ৩/৪৩, চেফাস ঝুয়াও ০/৬)।