জলপাই পাতার ব্যবহার
জলপাই তেলের গুণের কথা কম বেশি সবাই জানি। তবে জলপাই পাতার যেসব গুণাবলী রয়েছে তা হয়ত অনেকেরই অজানা। বিভিন্ন রোগ নিরাময় থেকে শুরু করে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে জলপাই পাতার উপকারি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো-
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: জলপাইয়ের পাতায় রয়েছে আলিওরেপিয়েন নামক একটি উপাদান। যেটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অনিয়মিত হৃদস্পন্দন কমায়। হার্টের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতেও এটি ভালো কাজ করে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ: গবেষণায় দেখা গেছে, জলপাই পাতা রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষ করে এটি ‘টাইপ টু’ ডায়বেটিস প্রতিরোধ করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: জলপাইয়ের পাতার নির্যাস স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি ক্যান্সার সহায়ক কোষ বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়। এছাড়া এটি টিউমার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে থাকে।
হাড়ের গঠন: স্পেনিস একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অলিওপিয়ন হাড়ের ঘণত্ব কমে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এটি হাড় ক্ষয় রোগের সঙ্গে লড়াই করে। এছাড়াও জলপাই পাতা হাড় তৈরিকারী কোষ গঠন করতে সাহায্য করে। একে মোটামুটি নিরাপদ খাবারই বলা যায়। জলপাইয়ের পাতার নির্যাস তরল আকারে বা শুকিয়ে গুঁড়ো করে খেতে পারেন। জলপাইয়ের পাতা দিয়ে চা তৈরি করেও খাওয়া যায়।
সূর্যের বেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে: যদি অনেক সময় ধরে রোদে ঘোরাফেরা করতে হয় বা কোন কাজ করতে হয়। তবে রোদের কারণে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা অনেক কমে যায়। এতে ত্বকের পুরত্ব অনেক বৃদ্ধি পেতে থাকে। জলপাই পাতায় থাকা অলিওপিয়ন নামক উপাদান ত্বক পুরো হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি মেলানিনের উপাদানকে ধীরগতি করতেও সাহায্য করে। সেইসঙ্গে জলপাই পাতায় উচ্চ মাত্রায় এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় এর রস ত্বক থেকে বলিরেখা দূর করতেও সাহায্য করে। এটি ত্বকের অকাল বার্ধক্যও রোধ করে থাকে।
ক্ষত ভালো করে: মেডিসিনাল প্ল্যান্ট নামক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, জলপাই পাতার নির্যাস অয়েন্টমেন্টের থেকে দ্রুত ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে। কারণ জলপাই পাতায় উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই কাটা, ছেঁড়া ও ফুসকুড়ির মধ্যে জলপাই পাতার রস দিলে অনেক দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
চুলের জন্য উপকারি: জলপাই এর মতোই জলপাই পাতার রস চুলের জন্য খুবই উপকারি। এটি চুলকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। এই রস চুলের গোড়ার ফলিকলের মধ্যে ঢুকে চুলকে আদ্র করে রাখে। আর চুলকে দীপ্তিময় করতে সাহায্য করে থাকে।
রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে: পৃথিবীর অনেক দেশেই জলপাই পাতার রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারণ এই পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি ঠান্ডা-জ্বর কমাতেও সাহায্য করে থাকে। এক গবেষণায় জানা গেছে যে, জলপাই পাতার রস ডিমেনশিয়ার উপসর্গ কমাতেও সাহায্য করে। আরথ্রাইটিসের প্রতিকার হিসেবে জলপাই পাতার রস অনেক ভালো কাজ করে থাকে। এছাড়াও এই রস শরীর থেকে খারাপ কোলেস্ট্রলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি: জলপাতা শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর এই শুকনো পাতাগুলো গ্রান্ডারে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এবার এক কাপ পরিমাণ পানিতে এক টেবিল চামচ জলপাই পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে নিবেন। ১০ মিনিটের মতো এগুলো জ্বাল দিতে হবে। উপকারিতা লাভের জন্য এভাবে প্রতিদিন এক কাপ জলপাই পাতার রসের চা পান করতে পারেন। স্বাদ ভালো না লাগলে এর সঙ্গে মধু বা লেবু মিশিয়ে নিতে পারেন।
সতর্কতা: গর্ভবতী বা যেসব মায়েরা বাচ্চাদের দুধ পান করান, তারা জলপাই পাতার রস গ্রহণের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন। এছাড়াও ব্লাড প্রেসারের রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই পাতার রস গ্রহণ না করাই ভালো।