সাতক্ষীরার দেবহাটায় শিশু তমা হত্যা এখনও রহস্য ঘেরা
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পুষ্পকাটি গ্রামের শিশু ফারিয়া সুলতানা তমা (৪) হত্যা রহস্য ঘিরে রয়েছে। অভিযোগের তীর মৃত তমার পিতা ফরহাদ গাজীর দিকে। গত ২০ শে সেপ্টেম্বর পানিতে ফেলে দিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় অবুঝ শিশু তমাকে।
এ বিষয়ে তমার মা বাদী হয়ে গত ২২ শে সেপ্টেম্বর দেবহাটা থানায় ছয় জনকে আসামি ও আরো চার, পাঁচ জনকে অজ্ঞাত দিয়ে দেবহাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই দিন রাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তমার পিতা ফরহাদ বলেন,২০ শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে তার মেয়ে বায়না ধরে খাবার খাওয়ার জন্য। এজন্য সে মেয়েকে নিয়ে পাশের এবাদুলের দোকানে যেয়ে খাবার কিনে বাড়ী ফেরার পথে একই এলাকার সিয়াম উদ্দীন গাজীর ছেলে জিয়ারুল (৩৫) সহ ৭-৮ জন তার পথ রোধ করে।
কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত মান্নান সরদারের ছেলে লাল্টু সরদার (২৮) সজরে টর্চ লাইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে সাথে সাথে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার জ্ঞান ফিরে আসলে সে দেখে তার নিজের গেঞ্জি দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে রেখে গিয়েছে জিয়ারুলের দলবল।
এসময় সে মুখ বাঁধা অবস্থায় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে কল করেন আফছার গাজীর ছেলে আব্দুল আলীমের কাছে। তারপর আলীম ফরহাদের নানিকে সাথে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ওই পুকুর পাড় থেকে জ্ঞান শূন্য ও মুখ বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরের দিন সকালে পুকুরের পানিতে ভাসা অবস্থায় পাওয়া যায় তমার মরদেহ।
বিষয়টি সাজানো নাটক বলে দাবী স্থানীয়দের। কুচক্রী কিছু লোকের কথা শুনে ও নিজের শত্রুদের ফাঁসানোর জন্য এমন নাটক সাজিয়েছে বলে ধারনা করছে এলাকার সচেতন মহল।
এবিষয়ে আলীমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, রাতে ফরহাদ তাকে ফোন দিয়ে দিলে তাকে মুখ বাঁধা অবস্থায় ওই পুকুরের পাশের থেকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার রায়হানের পরামর্শ অনুযায়ী সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
এবিষয়ে ফরহাদের মামা রজব আলী ও আকবর আলী বলেন,ওই রাতে তাদের মায়ের কাছে শোনে তার ভাগ্নেকে কারা মারধর করে ফেলে রেখে গেছে। এই খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় মেম্বারের সহযোগিতায় এ্যাম্বুলেন্স যোগে তাকে সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে বলে তার জানতে পারেন।
তার পরের দিন সকালে পুকুরের ঘাটে তাদের নাতনীর মরা দেহ পাওয়া যায় বলে জানান। অপর একটি প্রশ্নের জবাবে বলেন হত্যা কারা করেছে এটা বলা সম্ভব হচ্ছেনা তবে বিষয়টি নিয়ে তারাও বিভ্রান্তের মধ্যে আছে তার ভাগ্নের ভাষ্য অনুযায়ী ।
স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন তার শরীলে কোথাও গুরুতর আঘাতের চিহৃ দেখা যায়নি তবে ফরহাদের কপালের উপরে সামন্য ফোলা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে বলেন,ফরহাদকে যে স্থানে মারধর করা হয়েছে তার আশে পাশে তাদের বাড়ী কিন্তু কোন মারধর বা কোন ধরনের আওয়াজ তারা পাননি।
তবে তাদের ধারণা ফরহাদ তার শত্রু পক্ষকে ফাঁসোনোর জন্য তার মেয়ে তমাকে হত্যা করে এই নাটক সাজিয়েছে। যদি ফরহাদের সাথে শত্রুতা থাকলে তাকে মারত তার অবুঝ শিশুকে কেন হত্য করবে? তাছাড়া সে ওই অবস্থায় আলিমের কাছে ফোন করল কিভাবে? এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার উপ-পরিদর্শক মামুনুর রহমান বলেন, আসামি ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। এবং তমা হত্যা কান্ড কিছুটা ধুম্র জালের মধ্যে রয়েছে প্রকৃত রহস্য উদঘটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।