লাশ টেনে সংসার চলে নুরু মিয়ার
বাগেরহাটের চিতলমারীতে লাশ টেনে জীবিকা চালায় নুরু মিয়া। লাশ টেনে জীবিকা অর্জন করা তার একমাত্র পেশা। সে লাশ সদ্য মৃত হোক আর গলা পচাই হোক তাতে তার কোনো অসুবিধা নেই। সে লাশ তুলতেও তার কোনো ক্লান্তি, ভয় কিংবা সংকোচ নেই। লাশ বহন করে বাগেরহাট জেলা সদরের মর্গে নিয়ে যাওয়াতেই তার কাজ শেষ হয় না। ডোমকে যেন বেশি টাকা দিতে না হয় সে জন্য তিনি নিজেই ডোমের ব্যবহৃত সেনি, চাকু ব্যবহার করে লাশের মগজ, হৃদপন্ড, পাকস্থলিসহ ভেতরের প্রয়োজনীয় সব অংশই টেনে বের করে কর্তব্যরত ডাক্তারের সামনে উপস্থাপন করেন। সমাজের অধিকাংশ মানুষ যে কাজটিকে অসম্ভব বলে মনে করেন, সে কাজটি নুরু মিয়া নির্বিগ্নে বেছে নিয়েছেন। নুরু চিতলমারী উপজেলার সদর চিতলমারী ইউনিয়নের আড়–য়াবর্নী গ্রামের মরহুম সুলতান সরদারের ছেলে। নুরুর এ পেশায় তার পূর্ব পুরুষেরা কখনও আত্ম নিয়োগ না করলেও কেন নুরু এ পেশটিকে বেছে নিয়েছেন, এ নিয়ে অনেকের মাঝে কৌতুহল রয়েছে। তবুও নুরু এ পেশায় ১৮ বছর পার করেছেন।
উপজেলার কোথাও কোন অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর সংবাদ শুনলেই নুরুমিয়া সেখানে ছুটে যান । তার ভ্যানগাড়ীটা নিয়ে সারাদিন উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স, থানার গেট সহ বিভিন্ন ক্লিনিকের সামনে অবস্থান নিয়ে তাকেন নুরু মিয়া। যেখানে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর লাশপাওয়া যায় সেটি নিয়ে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদরে যেতে হয় নুরুকে। আবার ময়না তদন্ত শেষে লাশটির অভিভাবকের কাছে পোঁছে দেন। বিনিময়ে যে টাকা উপর্জন করে তা দিয়ে চলে নুরুর স্ত্রী-পুত্র ও কন্যা সন্তানের ভোরন পোষণ।
নুরু একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হয়েও এমন পেশা বেছে নেবার কারন ? এবং দীর্ঘ দিনের এ পেশাটিতে রাত এবং দিনের বেলায় লাশ নিয়ে চলাফেরায় কোন ভয় বা আতঙ্ক কাজ করছে কিনা ? এমন প্রশ্নে নুরু জানান, অনেকে যে কাজটি করতে পারেনা সেটা করতে হয়তো আমি সক্ষম হয়েছি। এখানে মান সম্মান বলে আমি কিছু বুঝিনা, আমি বুঝি এটা হালাল কামাই। আর ভয়তো প্রথম দিকে একটু করতো, এখন ভয় আমাকে দেখলে পালিয়ে যায়। ভয়ের এবিষয়ে কিছু বলতে গেলে আপনিও ভয় পাবেন। কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে নুরু বলেন, পেটের দায় এধরনে পেশা বেছে নিলেও অনেক সময় স্বঠিক নিয়মে টাকাটা আমি হাতে পাইনা এটাই দুঃখ।