৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন হয়েছে ৬৬ হাজার হেক্টর জমি : নাসা

১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫১ বছরে ৬৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা।

সংস্থাটির অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘নাসা আর্থ অবজারভেটরি’তে গত আগস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে স্যাটেলাইটে পাওয়া ১৪টি রঙিন ছবির মাধ্যমে ১৯৮৮ থেকে এ পর্যন্ত সময়কালে পদ্মা নদী কীভাবে তার আকৃতি ও পথ পরিবর্তন করেছে তা দেখানো হয়েছে। এসব ছবির মাধ্যমে পদ্মার আকৃতি, প্রস্থ, গভীরতা সব আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা পদ্মার ভাঙন বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন।

নাসার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, ছবিতে প্রত্যেক বাঁক আলাদাভাবে পদ্মা নদীর ভৌগোলিক ইতিহাসের গল্প বলে। সব ছবি সংগ্রহ করা হয় এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির শুষ্ক মৌসুমে, নাসার ভূমি পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, গত ৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন হওয়া মোট জমি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর শিকাগোর সমান। পদ্মার উপকূলে এ তীব্র ভাঙনের পেছনে প্রধানত দুইটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি প্রাকৃতিক ও মুক্ত পানি প্রবাহবিশিষ্ট নদী। এই নদী যেন মুক্তভাবে প্রবাহিত হতে পারে সেই ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন সময়ে তীরবর্তী ভবনগুলো রক্ষা করতে বালুর বস্তা ফেলা হলেও ভাঙন ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেই। দ্বিতীয়ত, নদীর তীরে বড় বালুচর রয়েছে যা দ্রুতই ধসে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বহু বছর ধরে গবেষকরা নদীর বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এক তত্ত্ব মতে, নদীর নিচে পলি বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে। কিছু পলি ১৯৫০ সালে ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধসের অবশিষ্টাংশ। গবেষকরা মনে করেন, বালুর মতো এসব ক্ষুদ্র উপাদান নদীর মধ্য দিয়ে অর্ধশতাব্দী ধরে সৃষ্টি হয়েছে।

নাসার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন দশক ধরে পদ্মা নদী তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ, সোজাসুজি অবস্থান পরিবর্তন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট ছবিতে, সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়, যেখানে সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয়েছে। ১৯৯৮ সালে ভারতে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বন্যা দেখা দেয়, যা বাংলাদেশে আরও বেশি পানি ঢুকে পড়ে।

এর আগে, ‘চর জানাজাতের’ কাছে জায়গা-জমি ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে নদীর রেখাচিত্র তীব্রভাবে বেঁকে যায়। বক্ররেখাটি ১৯৯২ সাল থেকে বিকশিত হতে শুরু করে, ২০০২ সালে পতন শুরু হয় এবং এরপর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

প্রতিবেদনটিতে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা এবং নদী ভাঙনের ফলে এটি কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে সেদিকটিও উঠে এসেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে নদীর ভাঙন কিছু হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন উদ্বেগের কথা রয়েছে। যদিও কিছু গবেষকেরা আশা করছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে জমি প্রকৃতপক্ষে স্থির হতে পারে এবং এটি শেষ হওয়ার পর নদী ভাঙন হ্রাস পেতে পারে।

প্রতিবেদনটির শেষে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোর, পদ্মার ভাঙনের হার প্রকৃতপক্ষে হ্রাস পেয়েছে। নদীটি বক্ররেখার পরিবর্তে জমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এলাকাটি ভাঙন থেকে মুক্ত।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)