ভারতে রায়ের পরে ও বেশির ভাগ মানুষ সমকামিতার বিপক্ষে

সমকামিতা সাংবিধানিক অধিকার বলে ভারতের শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছে৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নং ধারায় সমকামীদের যৌন সম্পর্ককে এতদিন ‘অপরাধ’ বলে গণ্য করা হতো৷ এই ঐতিহাসিক রায়ে গোটা দেশ তোলপাড়৷প্রশ্ন উঠেছে, এই রায় কি প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে পারবে? পারলে কতটা? এক সমীক্ষা বলছে, বেশির ভাগ মানুষই সমকামিতার বিপক্ষে৷

সমকামিতা অপরাধ নয়৷ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চের রায়, সমকামী, উভকামী, রুপান্তরকামী, তথা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষেরও নিজের পছন্দমতো যৌনসঙ্গী বেছে নেবার অধিকার আছে৷ এটা তাঁদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ সামাজিক নৈতিকতার নামে ব্যক্তি বিশেষের অধিকার খর্ব করা যায় না৷ বিচারপতিদের কথায়, আমি যা, সেভাবেই আমাকে গ্রহণ করতে হবে সমাজকে৷ কিন্তু সমাজ কী বলছে ? দিল্লিকেন্দ্রিক সেন্টার ফর দি স্টাডি অফ ডেভেলপিং সোসাইটি সিএসডিএস-এর এক জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সমকামিতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে ৬১ শতাংশ৷ গড়ে চার জনের মধ্যে একজন মনে করেন, দুটি পুরুষ বা দুটি নারীর মধ্যে যৌনতা অন্যায় নয়৷ বয়স্কদের চেয়ে কম বয়সিরা (১৫ থেকে ১৭ বছর) সমকামিতা অন্যায় নয় বলে মনে করে৷ সমকামিতা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে বিশ্বাস৷ সিএসডিএস সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় রীতিনীতিতে যাঁদের আস্থা আছে, তাঁরা সমকামিতাকে অতটা খারাপভাবে দেখেন না, যতটা দেখেন ধর্মীয় প্রথায় যাঁদের আস্থা নেই, তাঁরা৷ প্রচলিত ধারণা ছিল এর বিপরীত৷ আরো দেখা গেছে, ছোট ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বড় বড় শহরে সমকামিতার গ্রহণযোগ্যতা অনেক কম৷ এটাও প্রচলিত ধারণার বিপরীত৷ পাশাপাশি, ভিন্ন মতাবলম্বীরা বলছেন, ভারতে সমকামিতাকে এমন স্বীকৃতি দেয়ার ফলে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে৷ সমকামী যৌনসঙ্গীদের পারিপার্শ্বিক বাতাবরণ আরো অনুকূল হবে৷ অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পথেঘাটে সবাই আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়েছিল, যাতে গতানুগতিক যৌনতার ধারণা পালটে যায় সমাজে৷ সম্পর্কের বাইরেও জীবন আছে৷ যৌনতা আছে৷এটা বোঝা দরকার৷ কারণ, পছন্দের ভিন্নতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে সংবিধান৷ এই রায়ে মুক্তি পেলো প্রাইভেসি বা বলা যায় ব্যক্তি পরিসর৷ প্রচলিত সামাজিক বিধান বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার যুক্তি, কোনোটা দিয়েই সাংবিধানিক পথ আটকানো যায় না, বৃহত্তর সমাজকে সেটা বুঝতেই হবে৷ তারপরেও একটা ‘কিন্তু’ আছে৷ সমাজের একটা অংশ মনে করেন, নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি৷ অন্যটা নয়৷

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)