মানসিক হীনমন্যতাই ইভটিজিংয়ের মুল কারণ
ইভটিজিং বলতে নারীকে বিরক্ত করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইয়ার্কি ঠাট্রার মাধ্যমে আমরা দাদি নানিকেও বিরক্ত করি। কিন্তু সেটা ইভটিজিংয়ের মধ্যে পড়ে না। বিরক্ত করার মধ্যে দিয়ে যদি কোন অনৈতিক প্রস্তাব, প্রেম ভালোবাসার প্রস্তাব, লোভ লালসার ইঙ্গিত, ভয় দেখিয়ে বা জিম্বি করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা, অবৈধ কাজে প্রলুব্ধ করা। যে কোন মেয়ে বা নারী- যে বয়সের হোক না কেন, অন্য কোন পুরুষ কর্তৃক আপত্তিকর আচরণের শিকার হলেই তা ইভটিজিং। বিবাহ-পূর্ব ভালোবাসা অশালীন কথাবার্তা বলা, প্রেমপত্র, মোবাইল ফোনে শ্রুতিকটু আলাপ, জনতার ভিড়ে পরপুরুষ কর্তৃক ইচ্ছাকৃত ধাক্কা ধাক্কি, ষ্পর্শ করা, চোখের ভাষায় অশুভ ইঙ্গিত করা, কথনে, ইঙ্গিতে ইন্দ্রীয় অনুভুতি উপলব্ধি করবার দূরভিসন্ধিকে ইভটিজিং বলা হয়। রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় আজকাল দেখা যায় অধিকাংশ মধ্য বয়স্ক লোকেরা, মেয়েদের ঘেসে যাবার চেষ্টা করে, কোনোভাবে হাতের সাথে একটু হাত লাগলেই যেন তারা পরিতৃপ্ত। মানসিক হীনমন্যতাই এর মুল কারণ। ইভটিজিং অল্প কিছু ছেলেদের অসুস্থ বা বিকৃত মানসিকতার ফসল। আমাদের এবং দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশেই মূলত: এই সামাজিক অভিশাপ এখনো রয়ে গেছে। এটা দূর করার প্রাথমিক পদক্ষেপ প্রতিটি পরিবারকে নিতে হবে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের মেয়েদের প্রতি সম্মান করা শেখাতে হবে। শালীন ধর্মীয় ও নৈতিক আচরণ করা শেখাতে হবে প্রতিটি শিশুকেই। শুধুমাত্র মেয়েদের পর্দার আড়ালে রাখলেই ইভটিজিং বন্ধ হবে না!
বিভিন্ন পত্রিকায় দেখা যায় বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পর্দানশীন লাজুক মেয়েদেরও ইভটিজিং-এর শিকার হতে হয়! সুতরাং মেয়েদের নয়, ছেলেদের সংযত ও সত্যিকার মানুষ হতে হবে আর প্রতিটি মেয়েকে সম্মানের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে। একটি মেয়ে তার ব্যক্তি-স্বাধীনতায় যে পোষাকই পরুক না কেন, তাতে কোন ছেলের বা পুরুষের আদিম-ভোগ-রিপু তাড়না হলে, তা ছেলেটি কিংবা পুরুষকেই দমন করতে হবে। ইফটিজিং জন্য মেয়েরা যদি ছেলেদের হাতে জিম্মি হয়েই থাকে এর জন্য মেয়েদের দুর্বল মনোভাব দায়ী। আর এই দুর্বল মনোভাব তৈরি হওয়ার পিছনে পরিবারের সদস্যরাও অনেক ভাবে দায়ী। কারন যখন কোন পরিবারে একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, তার জন্মের পর থেকেই দেখে শেখে যে, তার ছোট ভাই বা বড় ভাইকে যেমন সুবিধা বা কেয়ার করা হয়। তাকে তেমন কেয়ার করা হয় না। সামান্য কাজে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়। পরিবারের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তাকে দূরে রাখা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্তাও এর জন্য দায়ী। আপনি যখন মানসিক ভাবে দুর্বল, সবল যারা তারা আপনাকে দুর্বল জায়গায় আঘাত করবে। অনেকগুলো পরিবার মিলে সমাজ, আর অনেক সমাজ মিলে দেশটা, তাই কোন কিছু পরিবর্তন করতে হলে, পরিবার থেকে শুরু করা উচিত। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবি এ্যাডঃ শিমুল ফেরদাউস বলেন ইভটিজিংয়ের জন্য ১০০ % ছেলেরাই দায়ী। কারণ ইভ বা নারীদের টিজ করে ছেলেরাই, মেয়েরা নয়। মেয়েরা যদি ছেলেদের টিজ করে তাহলে সেক্ষেত্রে মেয়েরাই দায়ী। তবে সেটা ইভটিজিং হয় না, আদমটিজিং হয়।যদি কোন গৃহস্থের ঘরে চুরি হয় তাহলে পুলিশ গৃহস্থকে গ্রেপ্তার করেন না, গ্রেপ্তার করেন চোরকে।
এছাড়া ২০১০ সালের আইন মোতাবেক মেয়েদের উত্যক্ত করা, পেছনে লাগা বা যৌন হয়রানির অভিযোগের বিচার হতে পারে মোবাইল কোর্টে এবং এর শাস্তি হচ্ছে এক বছর কারাদন্ড এবং জরিমানা করার ও বিধান রয়েছে। ইভটিজিংয়ের শিকার হলেই সাথে সাথে রিয়াক্ট করবেন অবশ্যই.. চুপ করে সহ্য করবেন না । রাস্তায় হলে চিৎকার করুণ, কেউ কেউ কিন্তু আপনাকেই যা তা বলবে, তবুও, চিৎকার করুণ । স্বাধারণত এরা একই জায়গায় ঘোরাফেরা করে, মানে একটা জায়গাকেই টার্গেট করে, আপনি যদি একদিন চিৎকার করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি চিহিৃত হয়ে যাবে। আর একবার রিয়াক্ট করলে অন্তত ওই সময়ের জন্য আপনার উপর অত্যাচার দীর্ঘ হবে না থেমে যাবে । অফিসে ও সাথে সাথে রিয়াক্ট করুণ তা সে আপনার বস ই হোক না কেন । আজ যদি আপনার কথা কেউ বিশ্বাস নাও করে কাল করবে । তারপর সবার সাথে ও উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে শেয়ার করুণ । ডাক্তারের চেম্বারে একা যাবেন না, পারলে সাথে কাউকে নিয়ে যাবেন । নিজেকে ফিট করে গড়ে তুলুন, দু একটা ঘা লাগাতে না পারলেও যেন প্রয়োজনে দৌড়াতে পারেন । পুরুষ বনের পশু নয়, আধুনিক ব্যক্তি-স্বাধীনতার যুগে প্রকৃত মানুষ হতে হবে! তবেই আমাদের সমাজ ইভটিজিং-এর অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে!