সাতক্ষীরার ৩৯ ব্যবসায়ীর ব্যাংক একাউন্ট তদন্তে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
সাতক্ষীরার ৩৯ জন ব্যবসায়ীর ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের (তিন সদস্যের ) একটি তদন্ত টিম আজ সোমবার সাতক্ষীরাতে পৌছে তালিকাভূক্ত ৩৯ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব নাম্বার তদন্ত শুরু করেছে বলে জানাগেছে। যাদের ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত হচ্ছে তাদের ব্যাংকিং লেনদেন অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো তালিকাভূক্ত ৩৯ ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরার জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার জুয়েলার্স মালিক, ভোমরার একাধিক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী, কয়েক জন গরু ব্যবসায়ী, কয়েক জন (বর্তমান ও সাবেক) ইউপি চেয়ারম্যান, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও একজন জেলা পরিষদ সদস্য।
সাতক্ষীরার যেসব ব্যবসায়ীর ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত শুরু হয়েছে তারা হলেন, সাতক্ষীরা জেলা শহরের খান মার্কেটের অংকন জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী গৌর দত্ত, অমিত জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী জয়দেব দত্ত, তালার কুমিরার আদিত্য মজুমদার, ব্রাদার্স জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী আশুতোষ দে, আলিপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, জনপ্রিয় জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী সুমন কর্মকার ও বাবু কর্মকার, শ্যামনগরের নকীপুরের বিশ্বজিৎ মন্ডল, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ, শ্রী জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী দীন বন্ধু মিত্র, ঝাউডাঙ্গার এম ভি জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী মুকুন্দ ভারতী, ঝাউডাঙ্গার সাগর জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী রবিন্দ্র নাথ দে, আশাশুনির নিউ দে জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী দেব কুমার দে, কলারোয়ার সন্ধ্যা জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী হরেন্দ্র নাথ রায়, আধুনিক জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী গোপাল চন্দ্র দে, তালার দীপা জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী গনেশ চন্দ্র শীল, তালার নিউ জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী বাসুদেব দত্ত, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারীর মো: রাশেদুল ইসলাম, পদ্মশাখরার মো: লিয়াকত হোসেন, ঘোনার মো: হাবিবুর রহমান, কলারোয়ার বলিয়ানপুরের জালালউদ্দিন গাজী, কলারোয়ার চন্দ্রনপুরের গরু ব্যবসায়ী নাসির, একই উপজেলার কাকডাঙ্গার গরু ব্যবসায়ী ইয়ার আলী মেম্বর, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফা, বৈকারীর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অসলে, ভোমরার ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী, কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা শহরের রয়েল স্যানেটারীর সত্বাধিকারী মো: নজরুল ইসলাম, ভোমরার এ এস ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী আজিজুল ইসলাম, বাঁকালের ফিরোজ ইন্টারপ্রাইজ এর সত্বাধিকারী ফিরোজ হোসেন, বাঁকালের কে হাসান ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী খালিদ কামাল , ভোমরার মামা-ভাগ্নে ভান্ডারের সত্বাধিকারী আজহারুল ইসলাম, মেসার্স কাজী ইন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু, মেসার্স সুলতান ইন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী ইসরাইল গাজী, মেসার্স সাব্বির ইন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী শাহানুর ইসলাম শাহিন, মেসার্স নাজিম ইন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী গোলাম ফারুক বাবু (দেবহাটার পারুলিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ), মেসার্স রিজু এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী আবু মুসা এবং মেসার্স রোহিত ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী রাম প্রসাদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাংক ব্যবস্থাপক জানান, গত সপ্তাহে ৩৯জনের এই তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো হয়। এসব ব্যসায়ীদের ব্যাংক লেনদেন ( ব্যাংক একাউন্ট ওপেন থেকে আজ পর্যন্ত ) অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে সূত্র জানায়। এসব ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে , যে কোন সময় বাংলাদেশের ব্যাংকের তদন্ত টিম সরেজমিন এসে তালিকাভূক্তদের ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত করবে।
গত সপ্তাহে ৩৯ জন ব্যবসায়ীর এই তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানোর পর ব্যাংক গুলোতে তোলপাড় শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম সাতক্ষীরা পৌছে গেছে। তদন্ত টিম সোমবার সকাল থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। তবে তদন্তকারী ওই টিমের সদস্যদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।