টুম্পা খাতুনকে গণ ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার শুনানি শেষ
যাত্রাদলের নায়িকা ধর্মান্তরিত টুম্পা খাতুনকে গণধর্ষনের পর তার শরীরে কোরাসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ১১জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তার আসামী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে আদেশের জন্য আগামী ৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
মামলার আসামীরা হলেন,আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের গহর গাজীর ছেলে সাইফুল্লাহ গাজী (৩৮), একই গ্রামের ওমর আলী সরদারের ছেলে রিপন সরদার(৩০), এছহাক সরদারের ছেলে আবু মুছা (৩০), একই উপজেলার গদাইপুর গ্রামের রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম ওরফে ডাকাত ডালিম, দুর্গাপুর গ্রামের করিম বক্সের ছেলে কামরুল ইসলাম (৪৫), তার ভাই আনারুল ইসলাম (৩৫), আছিরদ্দিনের ছেলে লাভলু গাজী (৩৫), খালেক সরদারের ছেলে মহসিন সরদার (২৪), শহর আলীর ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৮) চেউটিয়া গ্রামের লতিফ সরদারের ছেলে তারামনি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী কবীর হোসেন (৩৬) ও খুলনা জেলা শহরের সোনাডাঙা গোবর চাকা মেইন রোডের আবুল হোসেনের ছেলে চিশতি ওরফে চুন্নু চোরা (৪০)।
আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইসমাইল সরদারের ছেলে শহীদুল সরদারের দায়েরকৃত মামলা থেকে জানা যায়, সাত বছর আগে যাত্রাদলের নায়িকা হিসেবে সাতক্ষীরার আশাশুনির দুর্গাপুর গ্রামের সোনা চৌকিদারের বাড়ির পাশে মাঠে গান করতে আসা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার বটবাড়ি গ্রামের মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের মেয়ে সোমা বিশ্বাসকে(২৫) ফুসলিয়ে নিয়ে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের সহযোগিতায় ধর্মান্তরিত করে টুম্পা খাতুন নাম দিয়ে তাকে বিয়ে করেন একই উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মাদকাসক্ত বহু বিবাহের নায়ক সাইফুল্লাহ। বর্তমানে তাদের মরিয়ম নামে দু’ বছর দু’ মাসের একটি মেয়ে আছে।
খাজরা ইউপি’র সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য তমেনাসহ একের পর এক পাঁচজনকে বিয়ের কথা গোপন রেখে তাকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা নিয়ে টুম্পার সঙ্গে সাইফুল্লার বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিবাদ করায় সাইফুল্লাহ টুম্পাকে মাঝে মাঝে নির্যাতন করতো। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ায় জোরালো কোন প্রতিবাদ না করেই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে থাকে টুম্পা। এরই জের ধরে গত বছরের ৯ জুন দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্বামীর বাগদা চিংড়ির হ্যাচারির বাসায় শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ১৪/১৫ জন টুম্পার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গনধর্ষণ করে। পরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে ও কাথা জড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১০ জুন টুম্পাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও পরে তাকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন টুম্পা মারা যায়। নিজেরা বাঁচতে আসামীরা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে টুম্পা খাতুনের লাশ পিরোজপুরে দাফন করে। মামলার বাদী নিজেকে নিহত টুম্পা খাতুনের ধর্ম ভাই বলে উল্লেখ করেন। আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪(১)/৯(২)/৯(৩)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। বিচারক মামলাটি রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আক্তারুল ইসলাম সকল আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত ২৬ এপ্রিল বাদী চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। ২৮ এপ্রিল শুনানি শেষে বিচারক হোসেনে আরা আক্তার সকল আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিনে মুক্তি পান। এ ঘটনায় টুম্পার বাবা, মা, ভাই ও বোন সাতক্ষীরা আদালতে এসে একবার আসামীদের পক্ষে ও পরে বাদী পক্ষে এফিডেফিড দেয়।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. এসএম হায়দার আলী অভিযোগ গঠনের জন্য শুনানি শেষে আগামী তিন সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।