স্বামী তুমি কার!

স্বামী-স্ত্রীর দুটি আলাদা বিজ্ঞাপন। তবে বিজ্ঞাপন দুটিতে স্ত্রী চরিত্র একই। কিন্তু স্বামী আলাদা। বিজ্ঞাপনে সুখী পরিবারের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে বিড়ম্বনার মুখে পড়েছে ভারতের তেলেঙ্গানা সরকার। বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া ওই নারীর দাবি, তাদের ছবি তোলা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু একটি বিজ্ঞাপনে অন্য এক ব্যক্তিকে তার স্বামী হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এদিকে পর পুরুষকে নিয়ে কেন ছবি তোলা-এ প্রশ্নে রেগে আগুন স্বামী। এ নিয়ে রীতিমতো সংসারে শুরু হয়েছে অশান্তি। অন্যদিকে বিজ্ঞাপনের দুই ব্যক্তিই তার স্বামী বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সূত্রপাত গত ১৫ অগস্ট। বিনামূল্যের দুই প্রকল্প ফসল বীমা এবং চোখের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেয় তেলঙ্গানা সরকার। স্বাধীনতা দিবসের দিন সে রাজ্যের প্রায় সব প্রথম সারির দৈনিকের প্রথম পাতায় ফলাও করে ছাপা হয় দুটি বিজ্ঞাপন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাশাপাশি ছিল দুটি বিজ্ঞাপন।

দুটি বিজ্ঞাপনে ছেলেকে কোলে নিয়ে হাসি মুখে একই নারী। মুখের ভঙ্গিমাও এক। কিন্তু দুই পুরুষ চরিত্র আলাদা। জানা গিয়েছে, কালো চেক জামা পরা যুবক তার স্বামী। কিন্তু অন্য বিজ্ঞাপনে সাদা জামা, মাথায় পাগড়ি ও গলায় গামছা নিয়ে কৃষকের বেশে মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। তিনি ওই নারীর স্বামী নন।

বিজ্ঞাপনী যুক্তিতে এর মধ্যে অন্যায় বা আপত্তিকর কিছু নেই। কিন্তু তার জেরে ওই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তারা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের দ্বারস্থ হন। অনুমতি ছাড়া কীভাবে স্বামীকে পাল্টে ফেলা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্ত্রী। ওই নারী জানান, ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে একদিন বাড়িতে আট-দশ জন লোক এসেছিলেন। তারা তখন বলেন, ছবি তুললে ঋণ পাবেন। আমাদের সই নেন এবং ফটো তুলে নিয়ে যান। আমরা অত পড়াশোনা জানি না। তাই ওরা যা বলেছিলেন, আমরা তাই শুনেছি।

তিনি আরও জানান, তারপর একদিন দেখতে পাই বাস, ট্রেন, খবরের কাগজে আমাদের ছবি ছাপা হয়েছে। কোথায় কার কাছে যাব, তা বুঝতে পারছিলাম না। তার মধ্যেই আবার অন্য একটি বিজ্ঞাপনে দেখি, আমার স্বামীর বদলে অন্য লোক আমার পাশে। এ নিয়ে আমাদের সংসারে তুমুল ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়ে যায়।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে ওই নারী এই অভিযোগ জানানোর পরই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনা করে শুরু হয় কটাক্ষ, ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, যখন সুখী পরিবারের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে, তখন একই নারীর সঙ্গে আলাদা ব্যক্তি কেন। অনেকে বলছেন, আসলে ওই দুই ব্যক্তিই তার স্বামী।

বিষয়টি সরকারকে চেপে ধরার মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে বিরোধীরা। বিতর্কের ঢেউ সামলাতে মাঠে নামতে হয়েছে সরকারকেও। ইতোমধ্যে বিজ্ঞাপন নির্মাতা দুই সংস্থাকে ডেকে পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে ওই সংস্থাকে কালো তালিকাভূক্তও করতে পারে সরকার।

চোখের চিকিৎসার এই প্রকল্প তেলেঙ্গানা জুড়ে ৮২৮টি মেডিকেল ক্যাম্প করে চক্ষু পরীক্ষা করা হবে। সেখানেই চশমা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হবে। আর ফসল বীমা প্রকল্পে সে রাজ্যের ২৮ লাখ কৃষককে ৫ লাখ টাকা করে ফসল বীমা দেয়া হবে। তার জন্য মাথাপিছু ২২৭১ টাকা বীমার প্রিমিয়াম দেবে তেলেঙ্গানা সরকার। কিন্তু সেই বিজ্ঞাপন দিতে গিয়েই কার্যত গ্যাঁড়াকলে পড়েছে সরকার।

যাহোক সরকারি প্রকল্পের প্রচারে বিজ্ঞাপনের সাফল্যের হিসাব ছেড়ে স্বামী তুমি কার-এ বিতর্ক থামাতে ব্যস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)