ঈদে সাতক্ষীরায় নারী ও শিশুদের কেনাকাটার ঢল
মোহনার বয়স এখন পাঁচ হলেও ঈদের জামা সে নিজেই পছন্দ করছে। বিক্রয়কর্মীকে তাই বারবার বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক দেখানোর জন্য বলে একটি পোশাক পছন্দ করে কিনে নেয় মোহনার । মোহনার পিতা ওবায়দুল ইসলাম জানান, শিশুদের কাছে ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানেই আনন্দ। তাই কোরবানির ঈদেও তার নতুন পোশাক নেওয়ার বায়না। তিনি আরও জানান, সাধারণত কোরবানির ঈদে তেমন একটা কেনাকাটা করা হয় না। এটা ত্যাগের ঈদ। তবুও বাচ্চার বায়না ধরার কারণে বাজারে এসেছেন তিনি। ওবায়দুল ইসলামের মত একইভাবে ছেলেকে নিয়ে বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন পুরাতন সাতক্ষীরা ঘোষপাড়া গ্রামের মাহমুদা বেগম। তিনি জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ঈদের সময় একটু নতুন পোশাক চাই। যদিও গত ঈদে নতুন পোশাক কিনেছি। তবুও আবার আনন্দকে বাড়িয়ে তুলতে নতুন পোশাক কিনতে এসেছি। শহরের বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্স, বড় বাজার সড়ক, থানা মসজিদ মার্কেট, নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, আবহাওয়া খারাপ থাকলেও ক্রেতাদের ভিড়ের কমতি নেই। প্রতিটি দোকানে ক্রেতারা যাচাই-বাছাই করে জিনিসপত্র কেনাকাটা করছেন। নিজেদের আর প্রিয়জনের জন্য কিনছেন বিভিন্ন পোশাক, জুতা, গহনা ইত্যাদি। শহরের থানা মসজিদের পাশে মীম গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, রোজার ঈদের তুলনায় বিক্রয় কম। তবুও ক্রেতার সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। তবে মহিলা ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। তারা বাচ্চাদের জিনিসপত্রই বেশি কিনছেন। এছাড়া বেবি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী রেজোয়ান জানান, এই ঈদের বাচ্চাদের পোশাকের চাহিদা বেশি থাকে। তবে পাশাপাশি মহিলাদের পোশাকের চাহিদাও
রয়েছে। চায়না বাংলা শপিং কমপ্লেক্সের বিক্রয়কর্মী আলিফ হোসেন জানান, শিশুদের
জন্য প্রতিবারের ঈদের ন্যায় এবারও বেশ ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পোশাক রাখা হয়েছে। বিক্রয়ও হচ্ছে। তবে রোজার ঈদের তুলনায় খুবই সামান্য। ক্রেতারা সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের বাচ্চাদের জন্য এসব পোশাক কিনছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা শহরের দোকান আর শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে বাচ্চাদের গাউন, ফ্রক, কামিজ, পার্টি ফ্রক, শর্ট কামিজ বিক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের লাচাও বিক্রয় করা হচ্ছে। এসব
পোশাক বিভিন্ন ডিজাইনের আর বিভিন্ন রঙের। ধরণ ভেদে এসব পোশাকের দাম রাখা হয়েছে তিনশ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছয় বছরের নিচে বাচ্চাদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। ছয় বছরের উপরে ছেলে-মেয়েদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া, দেশি বিদেশি পোশাকের আলাদা কাটতি তো রয়েছেই। তবে বেশি ভিড় না থাকার কারণে বেশ
স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন বলে জানালেন ক্রেতারা। আর যানজট না থাকায় ক্রেতারা কেনাকাটা করে উৎফুল্ল চিত্তে বাড়িতেও ফিরছেন। নার্গিস আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, গত রোজার ঈদে সকাল ১০টায় এসেছিলাম আর কেনাকাটা শেষ করে বাড়িতে পৌঁছাতে প্রায় বিকেল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার
সেরকম ভিড় না হওয়ায় বেশ নিরিবিলি কেনাকাটা করা সম্ভব হচ্ছে। এদিকে জুতোর দোকানেও ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের জুতো কিনছেন। বেশিরভাগ জুতোর দোকানে একদর হওয়ায় তেমন কোন ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। ক্রেতারা পায়ের সাথে জুতো আর পোশাকের ডিজাইন মিলিয়ে বেশ নিরিবিলি কেনাকাটা করছেন। সম্রাট সুজ’র সত্ত্বাধিকারী মঈনুল ইসলাম জানান, রোজার ঈদের তুলনায় বেচা-বিক্রি কম। তবে আশার করছি ঈদের আগে বাজার আরও একটু জমে উঠবে। এছাড়া, ছেলেদের পোশাকের দোকানগুলোতেও লক্ষণীয় ভিড় পরিলক্ষিত
হচ্ছে। তবে রোজার ঈদের তুলনায় নিতান্তই কম। বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানির ঈদে সাধারণত কম বিক্রয়ই হয়। সাতক্ষীরা নিউ মার্কেটের বিক্রয়কর্মী আরিজুল ইসলাম বলেন, সাধারণত কোরবানির ঈদে বিক্রয় কম হয়। তবুও আশা করছি শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে।