সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুলে দুদকের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে । দুর্নীতি আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে । দুর্নীতি আমাদের জাতীয় উন্নয়ন সমৃদ্ধি ও অর্জনকে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে। এই দুর্নীতিকে রুখে দেওয়ার এখনই সময়। দুর্নীতিকে ঘৃণা করে আসুন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
সোমবার সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুর্নীতি দমন কমিশনের ‘শিক্ষা উপকরণ বিতরণ’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা । তারা বলেন যে সমাজ দুর্নীতিকে লালন করে সে সমাজ কল্যাণকর নয়। সমাজে কল্যাণ ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় সবার আগে দুর্নীতিকে না বলতে হবে। আর এই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে নতুন প্রজন্মকে । তারাই সমাজের দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক হয়ে উঠবে। জীবনের প্রথম সোপান থেকে তাদেরকে দুর্নীতি থেকে নিজেদের রক্ষার কৌশল শিখাতে হবে।
সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মাহমুদুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক মো. আবুল হোসেন, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও শিল্পপতি ডা. আবুল কালাম বাবলা, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জিয়াউদ্দিন আহমেদ, সহ সভাপতি মুর্শিদা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল ওয়াদুদ, সদস্য আবদুর রব ওয়ার্সি প্রমুখ । এতে স্বাগত বক্তব্য দেন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক আলাউদ্দিন ফারুকি প্রিন্স।
শিশু কিশোরদের সৎ ও যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠার আহবান জানিয়ে প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন ‘ ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার পর প্রায় অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখনও দুর্নীতির কবল থেকে সমাজকে মুক্ত করতে পারিনি। তাই এখন দুর্নীতি বিরোধী আইন প্রণয়ন , প্রয়োগ ও তার বাস্তবায়নের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আইন ও সামাজিক আন্দোলন কেউ কারও জন্য সাংঘর্ষিক নয় বরং একে অন্যের পরিপূরক উল্লেখ করে তিনি বলেন শিশুদের সচেতন করে তুলতে হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকরাও শিশুদের সততার পথে চালিত করার শিক্ষা দেবেন। তিনি বলেন স্কুল থেকে তাদের দুর্নীতি বিরোধী পাঠ গ্রহণ করতে হবে। বিক্রেতা বিহীন সততা স্টোরে প্রবেশ করে কেনাকাটার সততা দেখিয়ে তাদের হাতে খড়ি দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি দুদকের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন আমরা সবাই দুর্নীতি বিরোধী কাজে এগিয়ে যাচ্ছি। সমাজের সর্বস্তরের দুর্নীতি রোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা ঘুষ দেবো না, আমরা ঘুষ নে বোনা , আমরা দুর্নীতি করবো না, অন্যের দুর্নীতি মেনে নে বোনা এই প্রত্যয় নিয়ে সকলকে এগিয়ে যাবার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন দেশ জুড়ে এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন চলছে । আমরা কম বেশি সফল হচ্ছি । এমন একদিন আসবে যেদিন সমাজ হবে দুর্নীতিমুক্ত। তিনি শিশু কিশোরদের দুর্নীতিকে না বলার অভ্যাস করার আহবান জানান। বিশিষ্ট শিল্পপতি ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন দুর্নীতি একদিনে দুর হবে না। আমাদের কাজ করতে হবে। শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। একদিন এই সমাজ হবে দুর্নীতিমুক্ত একটি আলোকিত সমাজ। জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি সারাতে উপযুক্ত ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন যেসব স্কুলে সততা স্টোর খোলা হয়েছে সেখানে আশানুরূপ সাড়া মিলছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দুর্নীতির মুলোৎপাটনে কাজ করছেন। আমরা তাদের প্রেরণা যোগাতে চাই। দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বলেন ছোট ছোট সোনামনিদের দুর্নীতি বিরোধী প্রচারণায় আমরা আশাবাদী যে আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে বেশ অনেকদুর এগিয়েছি। এই ধারা অব্যাহত রেখে দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি সুভাষ চৌধুরী বলেন দুর্নীতিরোধে আইন প্রয়োগের সাথে সাথে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সর্বস্তরে সামাজিক আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। গনশুনানির মতো অনুষ্ঠান করে দুর্নীতিবাজদের মুখোস খুলে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষা দিয়ে তাদের এগিয়ে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাগত বক্তব্যে সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক আলাউদ্দিন ফারুকী প্রিন্স বলেন তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কেবল জিপিএ ৫ পাওয়ার লক্ষ্যে শিক্ষা দেওয়া হয় না । তাদের শিখানো হয় নৈতিকতার শিক্ষা, দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষা। বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিয়ে সাতক্ষীরায় পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন সততা স্টোর গত বছর এপ্রিলে চালু হবার পর থেকে আজ অবধি কেউ বিনা মূল্যে কিংবা কম মূল্যে শিক্ষা উপকরণ অথবা টিফিনের জন্য খাবার গ্রহণ করেনি। এটাই তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে অতিথিবর্গ শিক্ষার্থীদের হাতে দুদকের দেওয়া শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন। এরই এক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা। ‘সামাজিক আন্দোলন ব্যতীত দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয়’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় এই মতের পক্ষে নিশাত রায়হানা রুহি ও তার দল এবং রানার্স আপ হয় ফারিহা সুজানা শিমু ও তার দল। এতে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় ফারিহা সুজানা শিমু। পরে বিদ্যালয়ে ‘মানবতার দেওয়াল’ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান।