রাজধানীসহ বেশ কয়েক জেলায় পরিবহন ধর্মঘট, ভোগান্তি চরমে
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় চলমান আন্দোলনের কারণে যাত্রী ও গাড়ি এবং চালকের নিরাপত্তা জনিত কারণে রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
এর মধ্যে ঢাকাসহ সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গা, পাবনাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে যানবাহন চালানো বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো।
ঢাকা:
রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক অবরোধ করে ধর্মঘট করছে পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় টার্মিনাল থেকে কোনও পরিবহন ছাড়েনি। শুক্রবার সকাল থেকে শ্রমিকরা এ আন্দোলন শুরু করে।
শ্রমিকরা জানান, সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দেবে না। তারা আরও বলছেন, গত কয়েক দিনে তাদের অনেক গাড়ি ভাঙা হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স দেখার কথা পুলিশের, অথচ দেখছে ছাত্ররা। এতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। তাই সরকারের প্রতি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক জামদানী খন্দকার বলেন, গত কয়েক দিনে আমাদের অন্তত পাঁচ শতাধিক গাড়ি ভাঙা হয়েছে। চালক ও হেলপারদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এটা তো শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরেও তারা এমন আন্দোলন করছে।
তবে শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। তিনি শ্রমিকদের উদ্দ্যেশে বলেন, ‘আপনারা আন্দোলন প্রত্যাহার করুন। বিষয়টি নিয়ে আমরা উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবো।
একই অবস্থা মিরপুরেও। শুক্রবার সকালে মিরপুর সাড়ে ১১-তে পরিস্থান পরিবহনের একটি গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় ১০-১২ জনের এক দল শ্রমিক। তারা জানান, মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে। কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হবে না।
আব্দুল্লাহ নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে শুক্রবার মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে।
এবিষয়ে মিরপুরের ডিসি (ট্রাফিক-পশ্চিম) লিটন কুমার সাহা বলেন, মালিক সমিতি এখনও ধর্মঘট ডাকেনি। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা ডাকতে চাইলে আমরা তাদের না করেছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকরা গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে পারেন।
সুনামগঞ্জ:
অনির্দিষ্টকালের পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার পরিবহন মালিকদের নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত নেয় সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘট চলবে বলে জানানো হয়েছে। তবে প্রশাসন যদি নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন সারা দেশ ব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু বাস ভাংচুর করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবে সড়কে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। মূলত এসব কারণ দেখিয়ে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
একই দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো।
রাজশাহী:
রাজশাহী থেকে সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সারা দেশে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বাস মালিকেরা। তবে বাসের নিরাপত্তার কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। তারা বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে রাতে বাস চলবে।
বাস না চলার এমন সিদ্ধান্তের কথা অনেকেই জানতেন না। সে কারণে অনেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। আমিন আলী নামে এক যাত্রী সকাল থেকেই বাসের অপেক্ষায় বসেছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কীভাবে গন্তব্যে যাবেন।
এছাড়া বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলো।
শুক্রবার সকাল থেকে জেলার সব রুটে যানবাহন চালানো বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সব যানবাহনও।
সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নামে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ১৫টি ট্রাক, পাঁচটি বাস, তিনটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও দু’টি মাইক্রোবাস ভাংচুর করা হয়। এতে আমাদের শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এ কারণে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য যানবাহন চালানো বন্ধ রেখেছি।
জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহুল ইসলাম লিটন বলেন, আমাদের যানবাহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কেউ রাস্তায় বের হবেন না।
ময়মনসিংহ:
একইভাবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতি।
গেল বুধবার রাতে জেলা মোটর মালিক সমিতির এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনে বাস চলাচল বন্ধ রেখে রাতে চলাচল করছে।
শুক্রবার সকালে শহরের মাসকান্দায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী কোনও বাস ছাড়েনি। সব ধরনের যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। অবশ্য শহরের পাটগুদাম ব্রিজের মোড় ও টাঙ্গাইল বাস টার্মিনাল থেকে আঞ্চলিক সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।