বেহুলা ভাসান দুই বাংলার মেলবন্ধন চায় ?
ভাষা এক৷ এক সংস্কৃতিও৷ এমনকী বিভিন্ন লৌকিক কৃষ্টিও এক৷ মঙ্গল কাব্যও দুই বাংলার একই। শুধু তাই নয় যোগাযোগের ক্ষেত্রেও দুই পারের মানুষের দাবি মেলবন্ধনের একটি করিডবালুরঘাট-তুরা ভায়া বাংলাদেশ করিডরের দাবি নিয়ে বহুদিন ধরেই সরব সীমান্তের মানুষ। দুই বাংলার অন্যতম মনসামঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে বালুরঘাট থেকে মেঘালয়ের তুরা পর্যন্ত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডরের আন্দোলন আরও প্রজ্জ্বলিত হল এপারের সংস্কৃতির শহর বালুরঘাটে।
বালুরঘাট-তুরা ভায়া বাংলাদেশ জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি’র ব্যবস্থাপনায় এই শহরের বালুরঘাট বিএড কলেজ প্রাঙ্গণে মঞ্চস্থ হল বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার নাটক ‘বেহুলা ভাসান’।
মনসা মঙ্গলও দুই দেশেরই অন্যতম মঙ্গলকাব্য। বেহুলা যেমন শুধুমাত্র জেদ ও আত্মবিশ্বাসে অটল থেকে তাঁর মৃত স্বামীকে পুনরায় জীবিত করেছিলেন। ঠিক তেমন ভাবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কড়িডর ঘোষণার ব্যাপারে নিজেদের দাবিপূরণ না হওয়া অবধি কোনও ভাবেই যে হাল ছাড়বেন না, তা ‘বেহুলা ভাসান’ নাটক মঞ্চস্থ করিয়ে বুঝিয়ে দিলেন জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটির সদস্যরা।
বাংলাদেশের গাইবান্দা উপজেলার চিন্তক থিয়েটার পরিবেশিত এই নাটকের কুশীলবদের অভিনয় মঞ্চসজ্জা আলোক নিক্ষেপ তথা বিভিন্ন দৃশ্যপট নাটকের শহর বালুরঘাটের দর্শকদের অভিভূত করে দিয়েছে।
চিন্তন থিয়েটারের নির্দেশক বাংলাদেশের বাবুলাল চৌধুরী জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মেঘালয় থেকে বালুরঘাট পর্যন্ত সাংস্কৃতিক ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটা বন্ধন তৈরি হতে চলেছে। অল্পদিনেই করিডরের মাধ্যমে দুই দেশের মানুষ আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। করিডরের লক্ষ্যেই সীমান্তের ওপার থেকে এদেশের সংস্কৃতির শহর বালুরঘাটের মঞ্চে তাঁদের পৌঁছানো
বালুরঘাট থেকে মেঘালয়ের তুরা পর্যন্ত বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে করিডরের দাবি বহু বছরের। ভারত সরকারের প্ল্যানিং কমিশনের তালিকায় নাম থাকলেও আজও এই করিডর ঘোষিত হয়নি।
দুই বাংলা ও মেঘালয়ের মানুষ একজোট হয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এটি চালু হলে বালুরঘাট থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের দূরত্ব হবে মাত্র ৮৬ কিলোমিটার। বর্তমানে উত্তরপূর্ব ভারতের এই রাজ্যে পৌঁছাতে সময় লাগে যেখানে টানা দুইদিন। ইতিমধ্যেই এই করিডোরের স্বপক্ষে দুই দেশের মধ্যে চর্চাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি ফর করিডরের আহ্বায়ক নবকুমার দাস জানিয়েছেন, অবিভক্ত ভারতবর্ষে মনসামঙ্গল কাব্যের সৃষ্টি। দেশ ভাগের পরও দুই বাংলায় অসংখ্য বেহুলা আছেন। যে বেহুলারা বারবার বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন। কিন্তু স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে বেহুলাদের যে আত্মত্যাগ সেটিকে স্মরণ করিয়েই দুই বাংলার মেলবন্ধনে বাংলাদেশের চিরন্তন থিয়েটারকে আমন্ত্রণ জানানো বলে তিনি জানিয়েছেন।