ইতিহাস সৃষ্টি করে টাইগারদের সিরিজ জয়
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে মাশরাফির হাত ধরে প্রথম ওয়ানডেতে জয় পায় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ও জয়ের কাছে গিয়ে তরী ডুবে টাইগারদের। চার রানে না হারলে ওই ম্যাচেই সিরিজ নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের।
আজ তৃতীয় ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে টাইগাররা জয় পেয়েছে ১৮ রানে। এই জয়ের ফলে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল। বিদেশের মাটিতে দীর্ঘ নয় বছর পর সিরিজ জয়ের অবসান ঘটল মাশরাফি বাহিনীর।
এর আগে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের ওই সিরিজটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৪-১ ব্যবধানে।
শনিবার সেইন্ট কিটসে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
গত দুই ম্যাচে নিজেকে বেশ ভালোভাবেই মেলে ধরেছিল তামিম ইকবাল। তৃতীয় ম্যাচেও ওপেনিং ব্যাটিং করতে নামেন তিনি। গত দুই ম্যাচের সঙ্গী এনামুল হক বিজয়। একটু ধীর গতিতে হলেও বেশ ভালোই এগোচ্ছিল দল। কিন্তু ৯ ওভারের মাথায় জ্যাসন হোল্ডারের বলে কিমো পলের হাতে বল তুলে দেন বিজয়। আর কিমো পল বলটি লুফে নিয়ে মাত্র ১০ রানে সাজ ঘরে ফেরান বিজয়কে। ৩১ বলে ১০ রান করেন তিনি। সিরিজের প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন বিজয়। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৩ রান করেন তিনি।
এরপর তামিম ইকবালের সঙ্গে ৮১ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ২৬তম ওভারে অ্যাশলে নার্সের বলে কিমো পলের হাতে ক্যাচ হন তিনি। সাকিবের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৩৭ রান। গত ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করলেও আজ সুবিধা করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। ব্যক্তিগত ১২ রানে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। ইনিংসের ৩২তম ওভারে অ্যাশলে নার্সের বলে বোল্ড হন মুশফিকুর রহিম। এরপর সেঞ্চুরি করে সাজঘরে ফিরে যান তামিম ইকবাল। দলীয় ২০০ রানে দেবেন্দ্র বিশুর বলে কাইরান পাওয়েলের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ফেরার আগে তিনি করেন ১০৩ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ১১তম সেঞ্চুরি।
তামিম ইকবাল শুরু থেকেই সাবলিলভাবে ব্যাট করতে থাকেন। ১২০ বলে তিনি সেঞ্চুরি পূরণ করেন। এর আগে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন এই টাইগার ওপেনার। ওই ম্যাচে ১৩০ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৪ রান করেন তামিম ইকবাল। এরপর ৫৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। দলীয় ২৫৩ রানে জ্যাসন হোল্ডারের বলে ক্রিস গেইলের হাতে ধরা পড়েন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ২৫ বল খেলে ৩৬ রান করেন তিনি।
দলীয় ২৭৯ রানে শেলডন কটরেলের বলে এভিন লিউইসের হাতে ক্যাচ হন সাব্বির রহমান। আট বলে ১২ রান করেন তিনি। ইনিংস শেষে ৪৯ বলে ৬৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের এটি ১৯তম হাফ সেঞ্চুরি। পাঁচ বলে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
তামিমের সেঞ্চুরি (১০৩), রিয়াদের হাফ সেঞ্চুরি (৬৭*, ৪৯ বলে), মাশরাফির ঝড়ো ইনিংসে সেইন্ট কিটসে শেষ এক দিনের ম্যাচে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেটে ৩০১ রানের বড় স্কোর গড়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এটি সর্বোচ্চ স্কোর। বাংলাদেশের দেয়া ৩০২ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ২৮৩ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের পক্ষে ক্রিস গেইল ৬৬ বলে ৭৩ রান করেন। ৯৪ বলে ৬৪ রান করেন শাই হোপ। ৪১ বল খেলে ৭৪ রান করে অপরাজিত থাকেন রভম্যান পাওয়েল। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা ২টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ১টি, মোস্তাফিজুর রহমান ১টি ও রুবেল হোসেন ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৫৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার হাত ধরে প্রথম উইকেট শিকার করে বাংলাদেশ। ইনিংসের ১১তম ওভারে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে এভিন লিউইসকে ফিরিয়ে দেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
৩৩ বলে ১৩ রান করেন এভিন লিউইস। ইনিংসের ২২তম ওভারে রুবেল হোসেনের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন ক্রিস গেইল। ৬৬ বল খেলে ৭৩ রান করেন তিনি। ওয়ানডেতে এটি তার ৪৯তম হাফ সেঞ্চুরি। ৩৬তম ওভারে শিমরন হেটমায়ারকে বোল্ড করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
৩৮তম ওভারে রান আউট হন কাইরান পাওয়েল। ৪৪তম ওভারে মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে সাকিব আল হাসানের হাতে ধরা পড়েন শাই হোপ। ৪৮তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে রুবেল হোসেনের হাতে ক্যাচ হন জ্যাসন হোল্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফল: ১৮ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ইনিংস: ৩০১/৬ (৫০ ওভার)
(তামিম ইকবাল ১০৩, এনামুল হক বিজয় ১০, সাকিব আল হাসান ৩৭, মুশফিকুর রহিম ১২, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৬৭*, মাশরাফি বিন মুর্তজা ৩৬, সাব্বির রহমান ১২, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১১*; শেলডন কটরেল ১/৫৯, জ্যাসন হোল্ডার ২/৫৫, দেবেন্দ্র বিশু ১/৪২, কিমো পল ০/৭৭, অ্যাশলে নার্স ২/৫৩, ক্রিস গেইল ০/১৪)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস: ২৮৩/৬ (৫০ ওভার)
(ক্রিস গেইল ৭৩, এভিন লিউইস ১৩, শাই হোপ ৬৪, শিমরন হেটমায়ার ৩০, কাইরান পাওয়েল ৪, রভম্যান পাওয়েল ৭৪*, জ্যাসন হোল্ডার ৯, অ্যাশলে নার্স ৫*; মাশরাফি বিন মুর্তজা ২/৬৩, মেহেদী হাসান মিরাজ ১/৪৫, মোস্তাফিজুর রহমান ১/৬৩, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ০/১০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ০/২০, রুবেল হোসেন ১/৩৪, সাকিব আল হাসান ০/৪৫)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)
ম্যান অব দ্য সিরিজ: তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)