পুরো ইনিংস খেলে তামিমের নতুন রেকর্ড

ক্রিকেট জগতে ওয়ানডেকে মূলত মূল ফরম্যাট হিসেবে ধরা হয়। আর তাই ওয়ানডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশী থাকে। ৫০ ওভারের ওয়ানডেতে রেকর্ডের কমতি নেই। একের পর এক রেকর্ড বদল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে একটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ইনিংস খেলার।

সবশেষ রোববার এই কীর্তিতে নাম লেখালেন বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। তার আগেও বাংলাদেশের আরো দুইজনের নামের পাশে এই রেকর্ড যুক্ত আছে। তারা হলেন শাহরিয়ার নাফিস ও জাভেদ ওমর বেলিম।

গায়ানায় রোববার রাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাট করতে নেমে ১৩০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তামিম ইকবাল। ৫০ ওভার তথা ৩০০ বলের ম্যাচে ১৬০টি বল খেলেন তিনি।

তার আগে বাংলাদেশের একসময়ের দাপুটে ওপেনার শাহরিয়ার নাফিসও একই কীর্তি গড়েছিলেন। ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৩ রানের ইনিংস খেলে এই কীর্তিতে নাম লেখান তিনি। আরেক বাংলাদেশি সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮৬ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন। তবে তা দ্বিতীয় ইনিংসে। জিম্বাবুয়ের দেওয়া ২৩১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১০৩ রানেই সব উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মাত্র ৩০.৪ ওভার স্থায়ী ওই ইনিংসটিকে তাই ঠিক আদ্যোপান্ত বলা যায় না।

ওয়ানডেতে ইনিংসের আদ্যোপান্ত পর্যন্ত খেলা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তিনবার নাম আছে সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর। ২০০০ সালের অক্টোবরে নাইরোবিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ১৯৯৯ সালের ১১ নভেম্বর গোয়ালিয়রে নিউজিল্যান্ড আর একই বছরের ২২ মার্চ নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন সাবেক বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের মালিক ভারতীয় গ্রেট শচীন টেন্ডুলকারও এই কীর্তিতে তিনবার নাম লিখিয়েছেন। ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম দ্বিশতক হাঁকানোর ম্যাচে ঠিক ২০০ রানে অপরাজিত থাকেন শচীন। ১৯৯৯ সালের ৮ নভেম্বর হায়দ্রাবাদে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

এই তালিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট দানব ক্রিস গেইলের নাম আছে দুইবার। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পঞ্চম ওয়ানডেতে ১৫৩ বলে অপরাজিত ১৫২ রানের ইনিংস খেলেন এই বিধ্বংসী ওপেনার। ২০০৩ সালের ২২ নভেম্বর বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬০ বলে ১৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন গেইল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে ইনিংসের একদম শেষ বলে আউট হয়ে অল্পের জন্য আগের কীর্তির পুনরাবৃত্তি করতে ব্যর্থ হন গেইল।

দুইবার এই কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন সাবেক ক্যারিবিয়ান ওপেনার ডেসমন্ড হেইন্স। একবার ভারতের বিপক্ষে ১৯৮৯ সালে, আরেকবার একই বছরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। দুই ম্যাচেই জয় লাভ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকান এবি ডি ভিলিয়ার্স। ওই ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ইনিংসের আদ্যোপান্ত খেলে ১৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন হাশিম আমলা। সাবেক অজি ব্যাটসম্যান ম্যাথু হেইডেন ২০০৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে অপরাজিত থাকেন ১৮১ রানে।

২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক সাঙ্গাকারা জয়পুরে ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ১৩৮ রান করে আদ্যোপান্ত ব্যাটিংয়ের নজির গড়েন। একই কীর্তি গড়েন আরেক সাবেক লঙ্কান ওপেনার তিলকারত্নে দিলশান। ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে ১৬৫ বলে তার অপরাজিত ১৬০ রানের ইনিংসটি, যদিও দলের জয়ে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩২১ রানের টার্গেট বিরাট কোহলির অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ৪০ ওভারেই পেরিয়ে যায় ভারত।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপে দিলশান একই কীর্তির পুনরাবৃত্তি ঘটান। এবার প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। সাবেক প্রোটিয়া ওপেনার গ্যারি কারস্টেন এই কীর্তিতে একবার নাম লিখিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।

ভারতের সাবেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান দীনেশ মঙ্গিয়া ২০০২ সালের ১৯ মার্চ গোয়াহাটিতে সেসময়ের শক্তিশালী দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ১৫৯ রান করেন।

নতুন যুগের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন রোহিত শর্মা, মার্টিন গাপটিল, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৮ সালের ২০ জুলাই পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জামানও এই কীর্তি গড়েছেন। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন তিনি।

আর সর্বশেষ ২২ জুলাই তামিম ইকবালের ওই কীর্তি। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার। সেটি ছিল মাত্রই ১৯তম ওয়ানডে, আর ভারতের প্রথম। ওই ম্যাচটি ৬০ ওভার দৈর্ঘ্যরে ছিল। সেটা ছিল প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ (১৯৭৫ সাল)।

৬০ ওভারে ৩৩৪ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ইংলিশরা। জবাবে ৬০ ওভারে মাত্র ১৩২ রান করতে সক্ষম হয় ভারতীয়রা। ওই ম্যাচে ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম স্লথ ইনিংস উপহার দিয়ে ১৭৪ বলে অপরাজিত ৩৬ রান করেন গাভাস্কার।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)