কলারোয়া দরিদ্র কৃষক পরিবারের এক ফালি চাঁদ ফতেমা খাতুন
‘হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান’ কবির এই পঙক্তি যুগে যুগে প্রেরণার বাণী হয়ে মানুষের শক্তি ও সাহস জুগিয়ে আসছে। জীবনে অভাব-অপ্রাপ্তি থাকতে পারে। কিন্তু তাতে থেমে থাকে না জীবনের গতিধারা। প্রতিকূলতায় ভেঙে না পড়ে এগিয়ে চলাটাই জীবন। আর এই কথাগুলো যারা ব্রত করে নিয়েছে জীবনের সাথে-তারাই এগিয়ে যায়। পায় সাফল্যের পথ। যে পথ বেয়ে এগুনো যায় অপার সম্ভাবনার দিগন্তে। ফতেমা খাতুন কলারোয়া সীমান্তবর্তী সুলতানপুর গ্রামের এক দরিদ্র ঘরের মেয়ে। এসএসসিতে সে জিপিএ-৫ পায়নি। কিন্তু তাতে সে দমে যায়নি। জিপিএ-৫ না পাওয়ায় সে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে আরও প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। কঠোর অনুশীলন ও অদম্য মানসিক শক্তিকে পুঁজি করে এবার এইচএসসিতে ফতেমা অর্জন করে বহুল প্রত্যাশিত জিপিএ-৫। সে প্রমাণ করলো, আর্থিক অবস্থা ও প্রতিকূলতা সাফল্যের পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সাধারণত: অনেক শিক্ষার্থী এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও এইচএসসিতে তা পায়না। আর ফতেমার ক্ষেত্রে হয়েছে এর বিপরীতটি। ফতেমা খাতুন চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এ সাফল্য পেলো। তার বাবা আনারুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক। মা তাছলিমা খাতুন একজন গৃহিণী। এক চিলতে জমির ওপর খানিকটা ভগ্নদশার একটি বাড়িতে এদের বসবাস। ফতেমারা ২ বোন ও ১ ভাই। ভাইটি সবার ছোট। সে এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও বোন ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনো করে। তাদের ১০ শতকের মতো জায়গা রয়েছে। বাবা আনারুল ইসলাম অনেক কষ্ট করে অভাবের সংসার নির্বাহ করেন। ৩ সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। জানা যায়, ফতেমা এসএসসি পাসের পর কলেজে ভর্তি হয়েছিলো। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সে এক বছর লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়। সেই ফতেমাই এবার ফল বিপর্যয়ের এই এইচএসসিতে নজরকাড়া ফল অর্জন করলো। বৃহস্পতিবার ফলাফল জানার পর রাজিয়া উল্লাস প্রকাশ করে। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করে। খুব খুশি হন তার মা-বাবাসহ প্রতিবেশীরা। বাবা আনারুল ইসলাম বলেন. কোনো টিউটর ফতেমার ছিলোনা। তার যা যা প্রয়োজন পড়ে, বেশিরভাগই তিনি দিতে পারতেন না বলে আক্ষেপ করেন আনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, মেয়েকে আরও পড়াশোনা কীভাবে করাবেন-তা তাঁকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নেওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব বলে মনে করছেন তিনি। কলেজ অধ্যক্ষ গাজী রবিউল ইসলাম বলেন, শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক বিরূপ অবস্থার মধ্যে গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালাতে হয়। সেকারণে প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করতে হলে অনেক বেশি অধ্যবসায় করতে হয়। তিনি বলেন, এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পাওয়া ফতেমা এইচএসসিতে আরও বেশি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে। লেখাপড়াকে সে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে। তাই এইচএসসিতে সাফল্য আর দূরে থাকেনি, ধরা দিয়েছে তার কাছে এসে। শনিবার এই সাফল্যের প্রতিক্রিয়ায় মানবিক বিভাগের ছাত্রী ফতেমা খাতুন জানায়, সে ভবিষ্যতে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করতে চায়। চায় উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। আর এটি তার জন্য ভীষণ কঠিন হলেও অসম্ভব নয় বলে তার দাবি। চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজের অধ্যক্ষ ও সম্মানিত সকল শিক্ষকমন্ডলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফতেমা খাতুন তার জীবনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণের জন্য সকলের সহায়তা, দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেছে।