আশাশুনিতে পাউবো’র বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন
আশাশুনির খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, বেতনা নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে পাউবো’র বেড়িবাঁধ। কোন কোন জায়গায় ছাপিয়ে পানি ভেতরে প্রবেশ করেতে দেখা গেছে। মুহুর্মুহু বৃষ্টি, মৃদু বা চাপা পূর্বাহাওয়ায় পাউবো’র জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে ও ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে প্লাবিত হতে পারে বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। অমাবস্যা গোনের শনিবার থেকে শুরু হয় অনাবৃষ্টি, পূর্বালী চাপা হাওয়া। নদীতে জোয়ারে তীব্র স্রোতের তালে তালে দুই থেকে আড়াই ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর পানি রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ সীমা অতিক্রম করে পাউবো’র বেড়িবাঁধ কানায় কানায় হচ্ছে। সাথে প্রচণ্ড ঢেউ আঁচড়িয়ে আড়িয়ে মাটি ধুয়ে বাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনিভাবে নদীর পরিবেশ যদি স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে তবে ভয়াবহ ফাটল ও ভাঙন গ্রস্ত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ীবাঁধ যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে বিভিন্ন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
সরজমিনে ও মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন জানান, আনুলিয়া ইউনিয়নের কাকবাসিয়া, বিছট, মনিরামপুর, ভোলানাথপুর, গরালি বাজারের বেড়িবাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে কাকবাসিয়া ও বিছটের বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে এলাকাবাসী। গত ঈদ উল-আজহার আগের দিন বিছট মোড়ল বাড়ি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। গৃহহারা হয়ে পড়ে শতাধিক পরিবার। পাশের বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়া অসহায় করুণ দৃশ্য ওই সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাফ্ফারা তাসনীন পরিদর্শন করেন এবং তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য ও অনুদান দেন। যা বিভিন্ন পত্রিকায় ও অনলাইন পত্রিকায় ফালাও করে ছাপানো হয়।
প্রতাপনগরের ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, প্রতাপনগরের শ্রীপুর, কুঁড়িকাহনিয়া, চুইবাড়িয়া, কোলা, হিজলিয়া, রুইয়ারবিল, হরিশখালী, নাকনা, হাজরাখালী, চাকলা বেড়িবাঁধ চরমভাবে পূর্ব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো জোয়ারে ও ঝড়ো হাওয়ায় এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে।
শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল জানান, শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটা, বকচর, বিলবকচর, কাঁকড়াবুনিয়া, মাড়িয়ালা, পুইজালার বেড়িবাঁধ চরম ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়া র্প্শ্ববর্তী প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা-হিজলিয়া ভাঙ্গলেও জোয়ারের পানিতে শ্রীউলা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে। এ সব এলাকার বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকাবাসী প্লাবনের আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন জানান, আশাশুনি সদরের জেলেখালি-দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় বেড়িবাঁধ চরম ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে দয়ারঘাটের বাঁধে মেরামত কাজ চললেও স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নয়, তার পর কাজ চলছে যেন তেনভাবে। কিন্তু বর্তমানে নদীতে জোয়ারের পানির যে স্রোত ও পানি বৃদ্ধি হচ্ছে তার ভয়াবহতা আর মেরামতের কাজের যে মান তাতে নিজেদেরকেই নিরাপদ মনে করা যায় না। কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের বাহদুরপুর, গাবতলা, বাইনবসতের পাউবো’র বেড়িবাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ও নাজুক হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও ভুক্তভোগী সচেতন মহলের বক্তব্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেও কোন কাজের কাজ তো হয়ই না বরং বেশি করে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রকল্প পাশ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। বিপদের মুহূর্তে পাউবো’র কর্তা ব্যক্তিরা বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই, উপরে লিখেছি টাকা আসলে কাজ হবে, আবোল-তাবোল বলে কাটিয়ে দেন। এমনকি বিভিন্নভাবে তাদেরকে অবহিত করলেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বা বাঁধ পরিদর্শনও করেন বা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেননা। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই উপজেলার এ সব বাঁধগুলি মেরামত বিহীন যদি এ অবস্থা চলতে থাকে, তা হলে ভরা বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলির অবস্থা কি হতে পারে সেটা আজ এলাকার সচেতন মহলের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ! অতি দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলার সকল পাউবো’র বেড়িবাঁধগুলি মেরামত সহ স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ করেছে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগী সচেতন মহল।