কালিগঞ্জ থানার এএসআই রুবেলের বিরুদ্ধে নিরীহ যুবককে ধরে বেধড়ক মারপিট ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ
কালিগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক রুবেলের বিরুদ্ধে ইসমাইল হোসেন (২৮) নামে এক নিরীহ যুবককে আটক করে বেধড়ক মারপিট ও মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ইসমাইল হোসেন উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের উজায়মারী গ্রামের আমির আলী গাজীর ছেলে। আহত ওই যুবক কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে ব্যথা ও যন্ত্রণায় কাতরানো অবস্থায় সরেজমিনে দেখা যায়।
ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি ইটভাটায় ট্রলিতে মাটি বহনের কাজ করেন। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় তিনি ধলবাড়িয়া চৌমুহনী বাজার থেকে ওষুধ কিনে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌছানোর পর পুলিশের কথিত সোর্স হিসেবে পরিচিত চরদাহ গ্রামের গোলাম মোস্তফা ওরফে রাজমিস্ত্রি খোকনের ছেলে খালিদ হোসেন (২৬) ও মোটরসাইকেলে থাকা অপর দু’ব্যক্তি হঠাৎ তাকে মারপিট শুরু করে। তিনি মারধরের কারণ জানতে চাইলে ওই দুই ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে হাতকড়া পরিয়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে বেপরোয়া মারধর করে মোটরসাইকেলে তুলে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে সাদা পোষাকে ঘটনাস্থলে পৌছান কালিগঞ্জ থানার বহুলালোচিত উপ-সহকারী পরিদর্শক রুবেল। পৌছেই ইসমাইলের মুখে কানে চড় মারেন রুবেল। এতে তার কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। এএসআই রুবেল মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে ইসামাইলকে আখ্যায়িত করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে দেয়া (ডিএমসি) ফুটবল মাঠের পাশে নিয়ে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখে। সেখানে আবারও মারপিট করে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য আরেক দফা চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে এএসআই রুবেলসহ অন্যরা ইসমাইল হোসেনকে কালিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের পিছনে নিয়ে যায়। সেখানে পিছমোড়া করে দু’হাতে কড়া লাগিয়ে মোটরসাইকেলের সাথে বেধে হাত ও পায়ের গিরায় লাঠি দিয়ে পিটাতে থাকে রুবেল ও অপর দু’ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর ইসমাইল হোসেনের নিকট থেকে তার পিতার মোবাইল নাম্বার নিয়ে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন রুবেল। টাকা আদায়ে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকে কথিত সোর্স খালিদ হোসেন। ইসমাইলের পিতা আমির আলী গাজী অনেক কাকুতি মিনতি করে এএসআই রুবেলকে ৩০ হাজার টাকায় তার ছেলেকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে রাজি করান।
খালিদের উপস্থিতিতে এএসআই রুবেলকে ৩০ হাজার টাকা এনে দিলে রাত ২ টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের পিছন থেকেই ইসমাইল হোসেনকে তার পিতার হাতে তুলে দেয়া হয়। বিষয়টি কাউকে জানালে পরবর্তীতে ধরে এনে ক্রসফায়ার দেয়া হবে হুমকি প্রদান করে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় তারা।
একদিকে প্রচন্ড জ্বর, অপরদিকে পুলিশের বেধড়ক মারপিটে আহত ইসমাইল হোসেন বাড়িতে চিকিৎসা করে উপকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। সেখানে তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। ইসমাইল হোসেনের পিতার নিকট মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানার জন্য এএসআই রুবেল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি আটক করেছিলাম তবে মুচলিকা দিয়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে এএসআই রুবেলের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না দেয়ায় এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।