কোটি দর্শক কাঁদিয়ে আর্জেন্টিনার বিদায়
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি ইউরোপ জায়ান্ট ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা। পরতে পরতে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে ৪-৩ গোলে জয় লাভ করেছে ফ্রান্স।
কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে শুরু থেকে দুই দল সাবধানী শুরু করে। তবে সময়ের সাথে সাথে ফ্রান্সের আক্রমণের ধার বাড়তে থাকে। যদিও ম্যাচে বলের নিয়ন্ত্রণ বেশির ভাগ সময় আর্জেন্টিনার পায়ে ছিল। তবে যেটুকু সময় বলের নিয়ন্ত্রণ ফ্রান্স পেয়েছে এর প্রতিটি মুহূর্তে আক্রমণে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে ফরাসি তরুণরা।
ম্যাচের প্রথম আক্রমনটি অবশ্য আর্জেন্টিনাই করে। বাম পাশ দিয়ে পাওয়া ডি মারিয়া যোগ্য সঙ্গীর অভাবে বলকে ঠিকমতো পাস দিতে পারেননি।
ম্যাচের আট মিনিটে আক্রমণে যায় ফ্রান্স। এসময় এমবাপ্পেকে ফাউল করেন মাসচেরেনো। ফলে ডি বক্সের কাছে বিপদজ্জনক ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। গ্রিজমানের করা দারুন একটি ফ্রিকটি গোলবারের উপরে লেগে ফিরে আসে বল।
ম্যাচের ১১ মিনিটে দারুন একটি প্রতিআক্রমণে বল পায় এমবাপ্পে। ডি বক্সের ভেতর তাকে ফাউল করেন রোহো। ফলে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। পেনাল্টিটি দারুনভাবেই কাজে লাগান গ্রিজমান। এর ফলে ১-০তে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।
১৮মিনিটে আবার আক্রমণে আসে ফ্রান্স। মাঝমাঠ থেকে দারুনভাবে বল নিয়ে এগোতে থাকে এমবাপ্পে। ডি বক্স ঘেঁষে তালিয়াগফিকোর ফাউলের শিকার হন এমবাপ্পে। ফলে ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। অবশ্য এবারে আর্জেন্টিনা কোনো দুর্ভাগ্যের শিকার হয়নি। ম্যাচের ২২ মিনিটে একটি কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। বানেগার নেয়া কর্নার কিক ফ্রান্সের রক্ষণভাগকে তেমন কোনো পরিক্ষায় ফেলতে পারেনি।
ম্যাচের ২৪ মিনিটে মেসি থেকে বল পান পেরেজ। তবে অফ সাইড হওয়ায় আক্রমণে যেতে পারেননি। ম্যাচের ২৬মিনিটে আবারও আক্রমণে আসে ফ্রান্স। গ্রিজমান বেশ দারুনভাবে ডি বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন। তবে তার দুর্বল শট সহজেই ধরে ফেলেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। এর এক মিনিট পরেই আর্জেন্টিনার আক্রমণও ব্যর্থ হয়। ৩০মিনিটে ফ্রান্সের দারুন একটি প্রতিআক্রমণ জালের মুখ দেখেনি এমবাপ্পের পায়ে। শট নিতে কিছুটা দেরি করায় আর্জেন্টিনাকে বিপদমুক্ত করেন তালিয়াগফিকো।
ম্যাচের ৪১ মিনিটেই ডি বক্সের বাইর থেকে দূরপাল্লার দুর্দান্ত শট থেকে গোল করেন অভিজ্ঞ ডি মারিয়া। এর ফলে প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরে আলবিসেলিস্তেরা।
প্রথমার্ধে ১-১ সমতায় শেষ হবার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ২-১ এ এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ডি বক্সের কাছে থেকে পাওয়া ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা।
বানেগার করা ফ্রি কিকটি পান মেসি। বলটিকে দারুনভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মার্কাদোকে পাস দেন মেসি। বল নিয়ে নিপুণ দক্ষতায় জালে জড়ান রক্ষণভাগের এই তারকা। এর ফলে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার হাই ভোল্টেজ ম্যাচে ২-১ এ এগিয়ে যায় মেসিরা। ৫৬মিনিটে ফাজিও একটি ভুল পাস থেকে বিপদের সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল আর্জেন্টিনার শিবিরে। কিন্তু পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন গ্রিজমান।
ম্যাচের ৫৭ মিনিটে আক্রমণে আসে ফ্রান্স। গ্রিজমানের বাড়ানো শট থেকে বল পান পাভারড। ডি বক্সের বাইরে থেকে দর্শনীয় শটে বলকে জালে জড়ান পাভারড। এর ফলে তুমুল উত্তেজনাকর ম্যাচে ২-২ এ সমতায় ফেরে ফ্রান্স। ৬৪ মিনিটে ফ্রান্সকে আবার এগিয়ে দেন এমবাপ্পে। এর ৪মিনিট পরে মাঝমাঠে জিরু হয়ে থেকে বল পান এমবাপ্পে।এবারে দারুন ক্ষিপ্রতায় বলকে জালে জড়িয়ে ৪-২ গোলে এগিয়ে দেন ফ্রান্সকে। এরফলে ম্যাচ থেকে মেসিদের একপ্রকার প্রায় ছিটকেই দিলেন ১৯ বছর বয়সী এই তারকা। এর দুই মিনিট পরে আবার এগিয়ে যেতে পারত ফ্রান্স। গোলরক্ষক একা পেয়েও বল পাঠিয়ে দেন জালের পাশ দিয়ে।
৮৫মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু তার দুর্বল শট ঠেকাতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি ফ্রান্স গোলরক্ষক লরিসের।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের তিন পয়েন্টে হেড থেকে গোল করে আবার ম্যাচে প্রান সঞ্চার করেন আগুয়েরো। তবে শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠেনি আর্জেন্টিনা।ফলে ৪-৩ গোলেই ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল ফ্রান্স। এর ফলে দ্বিতীয় পর্বেই শেষ মেসিদের এবারের বিশ্বকাপ অভিযান।