গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় পর্বে ব্রাজিল
শেষ ষোলো নিশ্চিতের ম্যাচে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারালো ব্রাজিল। এর ফলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করলো নেইমার-কুতিনহোরা। ব্যবধান বাড়তে পারতো আরো। কিন্তু নেইমার ও জেসুসের গোল মিসের মহড়া জয়কে আরো বড় করতে দেয়নি।
শেষ ষোল নিশ্চিতের ম্যাচে শুরু থেকেই দুই দলই মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করে। প্রথম আক্রমণ অবশ্য ব্রাজিলই করে। ম্যাচের তিন মিনিটে করা আক্রমণে ছেলেমানুষি ভুল করেন জেসুস। গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। এবারের বিশ্বকাপে যেন গোল মিসের মহড়াতেই নেমেছেন ব্রাজিলিয়ান নাম্বার নাইন। ম্যাচের নয় মিনিটে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান সেলেসাও রক্ষণভাগের অন্যতম ভরসা মার্সেলো। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন লুইজ। এরপর দুই দল মোটামুটি সমানে সমান লড়তে থাকে। ম্যাচের ২৪মিনিটে ডি বক্সের ভেতরে জেসুসের পাস থেকে গোলবারের বেশ কাছে থেকেই বল পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু সার্বিয়ান গোলরক্ষক স্টোজকোভিকের হাতে লেগে তা গোলবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
২৯মিনিটে গোলরক্ষককে একেবারে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন জেসুস। ৩১মিনিটে নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন এলজালিক। ৩২ মিনিটে ব্রাজিল ডি বক্সে দুজান তাদিকের পাস থেকে বল পেয়ে ব্যাক হিল করেন মিত্রভিক। কিন্তু তা গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে কুতিনহোর পা থেকে বল পান পোউলিনহো। দারুণ একটি সুযোগ পেয়ে এবারে আর মিস করেননি মাঝমাঠের এই তারকা ফুটবলার। আলতো টোকায় বলকে জালে পাঠিয়ে ব্রাজিলকে ১-০ তে এগিয়ে দেন তিনি। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ডি বক্সের কাছে ঘেঁষে দারুণ একটি কিক নেন নেইমার কিন্তু তা জালের উপর দিয়েই চলে যায়। এর ফলে ১-০ তে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে কুতিনহোরা।
প্রথমার্ধে পিছিয়ে যাবার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে সার্বিয়া। তবে খুব দ্রুতই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্রাজিল। ৪৮ মিনিটে সেলেসাও স্টাইকার জেসুসকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন মাতিচ। ৫২ মিনিটে একটি প্রতিআক্রমণের চেষ্টা করে সার্বিয়া তবে তা ব্রাজিল রক্ষণভাগকে তেমন কোনো পরিক্ষায় ফেলতে পারেনি।
৫৫মিনিটে তাদিকের দারুণ একটি শটকে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মিরান্দা। এর এক মিনিট পরেই মাঝমাঠ থেকে বল পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু সময়ক্ষেপণ করে গোলরক্ষককে প্রায় একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি। এরকিছু পরেই গোলশোধের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে সার্বিয়া। ৬০মিনিটে অবশ্য বেশ বড় বিপদের হাতেই পড়েছিল ব্রাজিল। মিত্রভিকের দুর্দান্ত এক শটকে প্রথমে ধরতে ব্যর্থ হন এলিসন বেকার। ফিরতে শটে হেড করলেও তা দুর্বল হওয়ায় সে যাত্রায় রক্ষা পায় ব্রাজিল।
এর এক মিনিট বাদেই আবার আক্রমণে আসে সার্বিয়া। কিন্তু তা জালের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করে। ৬৪ মিনিটে আবারও আক্রমণে আসে সার্বিয়া। মিত্রভিকের এই হেডটিও গ্লাভসবন্দি করেন বেকার। ৬৬ মিনিটে পোউলিনহোর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ফার্নানদিনহো। এবারে ব্রাজিল কিছুটা ঝাড়া দিয়ে ওঠে আক্রমণে। ৬৮মিনিটে নেইমারের নেয়া কর্নার থেকে দারুণ এক হেডে ব্রাজিলকে ২-০ তে এগিয়ে দেন থিয়েগো সিলভা। ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার টিকেট প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে সেলেসাওরা।
দ্বিতীয় গোলে এগিয়ে যাবার পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ৫বারের চ্যাম্পিয়নরা। ৭০ মিনিটের মাথায় আরও একবার দারুণ এক প্রতিআক্রমণে যায় ব্রাজিল। দারুণ ক্ষিপ্রতায় বল নিয়ে ঢুকে পড়েন নেইমার। পাস দেন কুতিনহোকে। অবশ্য এবারের বিপদ থেকে রক্ষা পায় সার্বিয়া। ৭০মিনিটে ডি বক্সের বাহির থেকে গোলবারে দারুণ একটি শট নেন লুইজ।
এবারেও শটটি রুখে দেন সার্বিয়ান গোলরক্ষক স্টোজকোভিক। ৭৯মিনিটে কুতিনহোর বদলি হিসেবে আগুস্তভ মাঠে নামেন। ৮৬মিনিটে আরও একবার গোলের সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারেননি নেইমার। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সার্বিয়ান তারকা জিকোভিচ অবশ্য একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে তা জালের পাশ দিয়েই অতিক্রম করে। অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে আবারও একটি সুযোগ পেয়েও মিস করেন নেইমার। এর ফলে ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলকে। এর ফলে শেষ ষোলতে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়বে এফ গ্রুপের রানার্স আপ মেক্সিকো।