বিশ্বকাপ জিততে চাই: মেসি
ফুটবল বিশ্বকাপ `দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ ` এর পর্দা উঠতে আর মাত্র বাকি ৫ দিন। বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে প্রস্তুত প্রতিটি দল। সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতেই নিজ নিজ দলের ট্রেনিং ক্যাম্পে ঘাম ঝাড়াচ্ছেন প্রতিটি খেলোয়ার। প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গ ভেঙে জালে বল জড়ানো, মাঝমাঠের কর্তৃত্ব দখল, নিজেদের রক্ষণভাগ নিয়ে নানা কৌশল আঁটা নিয়েই চিন্তা-ভাবনায় সময় কাটছে দলগুলোর কোচ-খেলোয়াড়দের।
বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই মহাযজ্ঞের ২১তম আসরের মূল লড়াইয়ে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার আগে সম্প্রতি স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মুন্ডু দেপোর্তিভোকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার মহাতারকা লিওনেল মেসি। সাক্ষাৎকার আলোচনায় উঠে এসেছে বার্সেলোনা থেকে শুরু করে বিশ্বকাপভাবনা –
রশ্ন : লা- লীগায় বার্সা বার্নাব্যুতে পরপর তিনবার জয়ী হয়েছে এবং মাদ্রিদ তিনটি চ্যাম্পিয়নস চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিষয়টাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?
মেসি : এভাবে চলতে পারে না। তিন বার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলাম আমরা। এই বাধাটা আমাদের টপকাতেই হবে। আরও একটা বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বার্সেলোনার অধরা থেকে যাবে, এটা হতে দেয়া যায় না। বার্সেলোনা ক্লাবের সেটা প্রাপ্যও নয়। পরের বছর আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। রোমার কাছে হারের পরে আমাদের খুব রাগ হয়েছিল। ওরা অবশ্য খুব ভাল খেলেছিল। কিন্তু আমাদের এইভাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নেয়াটা মেনে নিতে পারিনি।
প্রশ্ন : বার্সেলোনায় গ্রিজম্যানকে সাইন করানো নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। আপনার মতামত কি ?
মেসি : আমি সবসময়ই বলে এসেছি, গ্রিজম্যান দুর্দান্ত একজন ফুটবলার। বড় ফুটবলার হলে তাদের পক্ষে অন্যদের সঙ্গে খেলাটা সহজ হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। এই মুহূর্তে ওর দারুণ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গ্রিজম্যানের বার্সেলোনায় আসা এখনো শতভাগ নিশ্চিত নয়।
আমরা বিশ্বের সেরা দল হতে চাই। তাই সেরা ফুটবলারদেরই দলে চাইব। গ্রিজম্যান বার্সেলোনায় এলে সেটা কোচের কাজ হবে তাকে কীভাবে খেলাবে, তা ঠিক করা।
প্রশ্ন : ক্রিশ্চিয়ানো বলেছেন যে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের ছেড়ে যেতে পারেন। আপনি কি মনে করেন?
মেসি : আমি আসলে, জানি না কী হবে। এটাও বলতে পারব না কেন সে এমনটা বলেছে। তবে এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে। রিয়ালে সে থাকবে কি না, একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
প্রশ্ন : তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর জিদান এগিয়ে চলেছেন। আপনি কি বুঝতে পেরেছেন?
মেসি : আমিও অবাক হয়েছি। কেউ ভাবতেই পারেনি এভাবে রিয়াল থেকে বিদায় নেবে জিদান। ওর ব্যক্তিগত কোনো কারণ নিশ্চয়ই ছিল। যা কেউ জানে না। তবে সত্য হলো, জিদান খুব ভালো অবস্থানে থাকতেই সরে গেল। রিয়ালের ম্যানেজার থাকাকালীন ও সব রকম শিরোপা জিতেছে। জিদান সম্পর্কে কোনো খারাপ কথা কেউ বলতে পারবে না।
প্রশ্ন : আপনি কি চান নেইমার পুনরায় বার্সায় ফিরুক ?
মেসি : ব্যক্তিগতভাবে বললে, অবশ্যই আমি এটা চাইব। সে দুর্দান্ত একজন ফুটবলার। এটা অবশ্যই ভালো হতো যদি নেইমার বার্সেলোনায় ফিরে আসে। কিন্তু জানি সেটা হওয়া খুব কঠিন। তার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো সত্যিই দুর্দান্ত। যদি আমাকে বলেন, তাহলে আমি চাইব অবশ্যই সে ফিরে আসুক।
প্রশ্ন : নেইমার যদি রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয় তাহলে কি হবে ?
মেসি : আমি কিছুতেই চাইব না, রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিক নেইমার।
প্রশ্ন : জাভি কাতার, ইনিয়েস্তা জাপানে গিয়েছেন। মেসি ও কি ভবিষ্যতেও একই কাজ করবেন ?
মেসি : জাভি (হার্নান্দেজ) কাতারে গিয়েছে, ইনিয়েস্তা জাপানে। আমি কী করব? এখনো তা ঠিক করিনি। যেকোনো জায়গাতেই যেতে পারি। তবে তার আগে দেখতে হবে আমার পরিবার কী চায়, দেখতে হবে সবকিছু কীভাবে চলছে। এটা আসলে একরাতে ঠিক করে ফেলার মতো ব্যাপার নয়।
আমার আমেরিকাতে বা অন্য কোথাও যেয়ে খেলতেও কোনো সমস্যা নেই…।
আমি সবসময়ই বলে এসেছি, ইউরোপে যেমন আমি বার্সাতেই শেষ পর্যন্ত থাকতে চাই। তেমনি আমি আর্জেন্টিনায় নিউওয়েলসের হয়ে শেষ পর্যন্ত খেলে যেতে ভালোবাসব। কিন্তু আমি জানি না, নিউওয়েলসে ফুটবল জীবন শেষ করব কি না। এটা অন্য কোথাও হতে পারে। এ ব্যাপারে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। দেখা যাক, কী হয়।
প্রশ্ন : আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ক্রসিং সম্পর্কে পিকে, ইনিয়েস্তা, সুয়ারেজ, জর্ডি আলবা, টের স্টিভেন, কোতিনহো বা পোলিনহোর সাথে আপনি কি কথা বলেছেন?
মেসি : জানি, বিশ্বকাপে বার্সেলোনার অনেকের সঙ্গেই লড়াই হবে। বেশ কয়েকজন সতীর্থের সঙ্গে এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি কথা বলেছি, মজা করেছি। ওরা বিভিন্ন দেশের হয়ে বিশ্বকাপে খেলবে। অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তবে সবার আগে আমার ভাবনায় আইসল্যান্ড। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : প্রথম প্রতিপক্ষ আইসল্যান্ডকে আপনি কিভাবে বিবেচনা করছেন ?
মেসি : আইসল্যান্ড খুব লড়াকু দল। ওদের রক্ষণটাও খুব ভালো, যা ২০১৬ সালের ইউরোতেই বোঝা গেছে। তারা খুবই সংগঠিতভাবে ফুটবল খেলে। তাদের বিপক্ষে খেলাটা মোটেই সহজ হবে না।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন, যখন আপনি লক্ষ করেন যে লিওনেল মেসি তার নিজের দলের সাফল্যের ওপর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জয়ের আশা করছেন?
মেসি : এই ব্যাপারটা আমাকে খুবই গর্বিত করে যে, বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ চান আমি যেন বিশ্বকাপটা হাতে তুলি। এটা সত্যিই গর্বিত হওয়ার মতো একটা ব্যাপার। তারা আমাকে বিশ্বকাপজয়ী তারকা হিসেবে দেখতে মরিয়া। এটা বেশ চিত্তাকর্ষক। আশা করি, রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতে আমি তাদের আশা পূর্ণ করতে পারব।
প্রশ্ন : এবারের বিশ্বকাপে কারা নজর কাড়বে বলে আপনি মনে করেন ??
মেসি : ব্রাজিলের নেইমার আর কোটিনহো (ফিলিপে) আছে। স্পেনের আছে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও ডেভিড সিলভা। জার্মানির হয়তো সেভাবে কোনো একক তারকা নেই, কিন্তু দল হিসেবে ওরা খুব ভালো। এর পর ধরুন বেলজিয়াম। ওদের ইডেন অ্যাজার্ড এবং কেভিন দ্য ব্রুইন খুব ভালো ফুটবলার। ফ্রান্সের আছে কিলিয়ান এমবাপে, গ্রিজম্যান। এই বিশ্বকাপে অনেক দলেই খুব ভালো ফুটবলার আছে।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠলে প্রতিপক্ষ হিসেবে কাকে চান ?
মেসি :যে কাউকেই। যদি সেটা আমাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল হয়, তাতেও কোনো আপত্তি নেই।
প্রশ্ন : আর্জেন্টাইন ভক্তদের জন্য আপনি কি বার্তা পাঠাতে চান ?
মেসি : আমি যেটা সবসময়ই বলে এসেছি, এখানে আসার আগেও বলেছি। আমরা সবসময়ই বিশ্বকাপ জিততে চাই। যদিও আমরা ফেভারিট নই। তবে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি। রাশিয়া পৌঁছানোর আগে প্রস্তুতির কোনো কমতি রাখছি না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু উজার করে দেব।