আশাশুনির রাজাপুরে গৃহবধুকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে গৃহবধু মোসলেমাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ জোরালো হতে শুরু করেছে। চরম নির্যাতনের পর মুমূর্ষূ অবস্থায় তার মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয় বলে মোসলেমার পিতা-মাতা ও পাড়ার লোকজন দাবী করছেন।
রাজাপুর গ্রামের মইনুল খাঁর কন্যা মোসলেমা ভালবাসা করে একই গ্রামের আইয়ুব গাইনের ছেলে সোহাগ গাইনের সাথে বিয়ে করে অনুমান ৫ বছর আগে। বিয়ে তার পিতামাতা কিংবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মেনে নিতে পারেননি। বিয়ের ৩ মাস পর থেকে শ্বাশুড়ি বউমার উপর শাসন ও নির্যাতন শুরু করেন। এরপর থেকে যৌতুকের দাবীতে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি চলছুতা করে মোসলেমার উপর নির্যাতন চালাতে থাকেন। এনিয়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধিসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনেকবার বসাবসি করেছেন। কিন্তু সুরাহা করতে পারেননি। গত ২ রমজান মোসলেমার মা জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান, সেখানে মটরসাইকেল ও মোবাইলের দাবীর কথা ওঠে। ১৫ রমজান বেলা ১১ টার দিকে বাড়ির সামনে প্রকাশ্যে শ্বাশুড়ি বউমাকে মারপিট করেন এবং পরবর্তীতে সোহাগ, তার মা ও বাবা জিউলীর করচা, ঝাটা দিয়ে অমানসিক মারপিট করে। বুকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। মারপিট এতটা ব্যাপক ছিল যে, তার অবস্থা বেগতিক হয়ে পড়ে। কেউ কেউ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিষপান করার কথা বললেও তার পিতা মইনুর, মা ও ভাইরা জানান, মুমূর্ষূ অবস্থায় তার মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। এর ৩/৪ ঘন্টা পর বেলা ৩টার দিকে তারা মোসলেমার পিত্রালয়ে খবর পাঠায়। ৪ টার দিকে স্থানীয় চিকিৎসক ডাঃ অরুনকে আনা হলে তিনি চেম্বারে নিয়ে ৫টার দিকে রোগি দেখেন। রাত্র ১২ টার দিকে অবস্থার চরম অবনতি ঘটলে রোগিকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে পাঠান হয়। পরদিন বেলা ১১.৩০ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। লাশ বেলা ২টার দিকে বাড়িতে আনার সাথে সাথে স্বামী সোহাগ পালাতে চাইলে তাকে আটকানো হলেও শহিদুল, মন্তেজ, ইদ্রিস, কুদ্দুছ ও আঃ ছাত্তারের সহায়তায় সে পালাতে সক্ষম হয়। বেলা ৪ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থানে পৌছে ছুরোতহাল রিপোর্ট শেষে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও হাত ও পিঠে ঝাটার কাঠি ফুটে থাকতে দেখা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী স্কুল ছাত্র সোহেল ঢালীর ছেলে জীবন জানান, তাদের সামনে মোসলেমাকে ঝাটা, জিউলির ডাল দিয়ে মারপিট, চুলের মুঠো ধরে মারপিট ও বুকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। চরম পিটানোর এক পর্যায়ে আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।
একই গ্রামের মৃত আঃ সামাদ কারিগরের ছেলে শাহাদাৎ হোসেন, মৃত বাবর আলী সানার ছেলে সিরাজুল ওরফে গাম্বুরসহ বহু লোক জানান, তাকে আগেও নির্যাতন করা হতো, ঘটনার দিন ব্যাপক মারপিট করা হয়েছিল।
ইউপি সদস্য শওকত হোসেন বলেন, কোন অন্যায় মানা যায়না, হত্যা কান্ড কিংবা নির্যাতনের পর বিষপানে আত্মহত্যায় বাধ্য করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী এলাকাবাসী সকলের। নির্মম নির্যাতন ও নিহতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকে কেঁদে ফেলেন তিনি। ঘটনার পরপরই সোহাগ, তার মা ও বাবা মোসলেমার শিশু কন্যা সোহানাকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবী হত্যা কিংবা বিষপানে আত্মহত্যায় বাধ্যকারীদের অবিলম্বে আটক করে আইনে সোপর্ধ করা হোক।
পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রাথমিক ভাবে ইউডি মামলা হয়েছে, লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদেরকে ছাড় দেওয়া হবেনা।