৫০ হাজার পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ করবে সরকার
ডেস্ক রিপোর্ট:
আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পরই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। তাই আগামী বাজেট প্রণয়নে নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণকে খুশি করতে রাখা হচ্ছে নানা প্রকল্প। এরই অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ‘যার জমি আছে ঘর নেই- তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ উপ-খাত প্রকল্পের আওতায় ৫০ হাজার পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দেবে সরকার। এছাড়া পাঁচ হাজার গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে ব্যারাক হাউজ নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় এসব কাজ করা হবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবেষণা কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দিয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্তি এবং অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
চিঠি বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কর্ম-পরিকল্পনায় রয়েছে- নিজ জমিতে ৫০ হাজার পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হবে। কক্সবাজার জেলায় খুরুস্কুল মৌজায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্তৃক ১০০টি ৫তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। পাঁচ হাজার গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে ব্যারাক হাউজ নির্মাণের মাধ্যমে পুনবার্সন করা হবে।
এছাড়া পাঁচ হাজার পরিবারকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে এবং প্রতি পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ঋণ প্রদান করা হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মধ্যমেয়াদি সংস্কার কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে চিঠি বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে আড়াই লাখ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অর্জন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, কক্সবাজার জেলার খুরুস্কুল মৌজায় সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক ২০টি ৫তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। আরও ৩০টি ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদানের কার্যক্রম চলমান। বাকখালী নদীর তীরে উক্ত এলাকায় উদ্বাস্তুদের (প্রায় ৬ হাজার) জন্য সর্ববৃহৎ আবাসন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। সেখানে আধুনিক শুঁটকিমহাল, পর্যটন জোন এবং সুউচ্চ শেখ হাসিনা টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০০৮-০৯ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অর্জনের বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, ২০০৮-০৯ হতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার ৩৮৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪১ হাজার ১০০টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৩৪ হাজার পুনর্বাসিত পরিবারকে পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং তাদের মধ্যে ৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া ‘যার জমি আছে ঘর নেই- তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ উপ-খাত প্রকল্পের আওতায় নিজ জমিতে গৃহহীন ২৭ হাজার পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এসব প্রকল্প গ্রহণ ভালো। তবে বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ জনগণকে তুষ্ট করার জন্য বাজেটে এ ধরনের অনেক প্রকল্প বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হয় না। তাই বাস্তবায়নের হার দিনদিন কমছে।
তিনি এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৯২ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এটা কমে দাঁড়ায় ৭২ শতাংশে। কাজেই শুধু বরাদ্দ রাখলেই হবে না, বরাদ্দের বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে সেটাও খোঁজ রাখতে হবে।’
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামী বাজেটের আকার হবে প্রায় চার লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার। বাজেটে মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আসছে বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হবে এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের খসড়া এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, আর বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে আনা হয়।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যার জন্য ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে ২২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
এরপর বরাদ্দের শীর্ষ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা, সেতু বিভাগের জন্য ৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য আট হাজার ৩১২ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের জন্য ছয় হাজার ছয় কোটি টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য পাঁচ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।