খুলনায় সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করছে পুলিশ: বিএনপি
ডি এস ডেস্ক:
খুলনায় পুলিশের অযাচিত হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘কিছু পুলিশি কার্যক্রম খুলনা সিটি করপোরেশনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছে। সেখানে কারণে-অকারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে যখন-তখন গ্রেফতার করা হচ্ছে।’
রবিবার (১৩ মে) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক শেষে দলের পক্ষে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন তিনি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কেসিসির নির্বাচনী মাঠে নারী পুলিশরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের নারী এজেন্ট, পুরুষ পুলিশরা পুরুষ এজেন্টদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। এজন্য অনেকে এজেন্টদের তালিকা চেঞ্জ করতে হচ্ছে। কারণ অনেকেই চাপের মুখে এজেন্ট থাকতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য আমরা কমিশনের কাছে আজকে আসলাম যে, কারণ খুলনা মহানগরের পুলিশ প্রশাসন এখন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন। আপনারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করুন। যাতে করে তারা আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি না করে। আমরা কমিশনকে বলেছি, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কার্যলয় সেটা ভঙচুর করা হয়েছে, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যালয় আওয়ামী লীগের লোকেরা তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। এসব কথা বলেছি। এবং তার কি ব্যবস্থা আপনারা নেবেন নেন।’
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ওনারা আজকেও বলেছেন যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। যেনো এটা না ঘটে। বলেছেন ব্যবস্থা নেবেন এবং যেই বাড়াবাড়ি করুক। সেটার বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবেন। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান, অবৈধ প্রভাব কেউ বিস্তার করুক এটা চান না। আমরা তাদের এসব কথা শুনেছি এবং এ কথাগুলি স্বস্তিদায়ক কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তার পরবর্তীতে যেটা ঘটে সেটা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। আমরা তাদেরকে বলেছি আপনারা যেটি বলতেছেন, সেটিই করুন। একটি মাত্র দিন বাকি আছে। আপনারা স্বাধীন একটি নির্বাচন কমিশন, আপনাদের যে ক্ষমতা, যে শক্তি এটা আপনারা প্রয়োগ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিত করেন। এবং যাদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে আমাদের কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে, তাদের মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করুন।’
বলা হচ্ছে সেখানে যাদেরকে পুলিশ আটক করছে তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, তাদের নামে মামলা আছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের আমলে মামলা নেই- বিএনপির এমন নেতাকর্মীর সংখ্যা খুব কম। আমাদের চেয়ারপারসনের নামে ৩৫টি মামলা, মহাসচিবের নামে রয়েছে ৮৮টি মামলা। আর মামলা থাকলেই তো গ্রেফতার করা যায় না। গ্রেফতার করতে হলে গ্রেফতারি পনোয়ানা লাগে। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অনেকের নামেই গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই।’
এরআগে আপনারা খুলনার তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়েছিলেন। কিন্তু ইসি সচিব বলেছেন, অল্প সময়ের মধ্যে তাদেরকে প্রত্যাহার করা সম্ভব না-এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যাদেরকে অতি উৎসাহী বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, যারা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম জবরদস্তি করছে আমরা তাদের প্রত্যাহার দাবি করেছিলাম। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে- না, তাদেরকে এই অল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করা সম্ভব না তাহলে তারা অন্তত এটা নিশ্চিত করুক যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করা হবে না। তারা যেন আমাদের নেতাকর্মীদের বেছে বেছে গ্রেফতার না করে। আমাদের প্রার্থীকে দুর্বল করা এবং সরকার পক্ষের প্রার্থীকে জয়ী করার যে অপকৌশল সেটা যেনো তারা অবলম্বন না করে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি দলের লোকেরা এসে কোনো অনুরোধ করলে সেটি কার্যকর হয়। আমরা আমরা অনুরোধ করলে সেটা কার্যকর হয় না। এটিই বাস্তবতা এখন। কিন্তু এই বাস্তবতাকে অতিক্রম করেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি এবং জনগণের ওপর আমাদের এই আস্থা আছে যে, তারা সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ইনশাল্লাহ আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন।’
এই যে প্রতিকূল অবস্থা চলছে এই অবস্থা চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত আপনারা নির্বাচনী মাঠে থাকবেন কি না? জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনাররা যেটা বলেছেন, সেটি তারা কার্যকর করবেন। এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা যাচ্ছি। যদিও ইতোমধ্যে এর প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে আমরা আশা করি, কমিশন নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে যথাযথ ভূমিকা রাখবে।’
বৈঠকে সিইসির সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
আমাগী ১৫ মে (মঙ্গলবার) খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।