পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলে বরাদ্দ সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা
ডেস্ক রিপোর্ট:
বছরের শেষ দিকে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে হিসেবে বর্তমান সরকারের শেষ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চুড়ান্ত হবে বৃহস্পতিবার। এডিপিতে সরকারের প্রতিশ্রুত মেগা প্রকল্পে অর্থ সরবরাহ করে যতদূর সম্ভব দৃশ্যমান করার চেষ্টা থাকছে। এজন্য থাকছে বড় অংকের বরাদ্দ। আর সরকারের তিন অগ্রাধিকার প্রকল্প- স্বপ্নের পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সেতু ও মেট্রো রেল পাচ্ছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
কমিশন সূত্র জানায়, এরই মধ্যে মেগা প্রকল্পে বরাদ্দসহ আগামী অর্থবছরের মোট এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে; যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার ‘এনইস সভায় তোলা হচ্ছে। নির্বাচনী বছরের এ এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্প সংখ্যা হবে ১ হাজার ৪৫১টি।
পদ্মা সেতু :
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে স্বপ্নের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে আগামী এডিপিতে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেতুটির চারটি পিলারের ওপর তিনটি স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে এটি দৃশ্যমান হয়েছে। ভোটের আগে বেশক’টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে বড় অংশ দৃষ্টিগোচর করার চিন্তা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সম্পূর্ণ দেশি অর্থায়নে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পে চলতি বছর বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা।
পদ্মায় রেল :
সড়কের পর দক্ষিণাঞ্চলকে একই সময়ে রেল নেটওয়ার্কেও আনতে চায় সরকার। এজন্য নির্মিতব্য পদ্মা সেতুর পাশাপাশি রেললাইন স্থাপনে জন্য পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার এ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি হওয়ায় এর কাজে বেশ গতি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মেট্রো রেল :
দেশের প্রথম মেট্রো রেলের কাজ চলছে বেশ জোরোশোরেই। রাজধানীর যানজট নিরসনে নেয়া ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলেপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর কাজ ২০১৬ সালের জুনে উদ্বোধন করা হয়। এতে আগামী এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৯০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এমআরটি বা মেট্রো রেলের এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা টাকা। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের কাজ শেষ করার কথা ২০১৯ সালে। এরইমধ্যে মেট্রোর উত্তরা দিয়াবাড়ি অংশে একটি স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে এটি দৃশ্যমান হয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে আগারগাঁওয়ে উঠতে যাচ্ছে অপর স্প্যান। এর জন্য দুটি পিলার প্রস্তুত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসছে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। এজন্য ক্ষমতাসীন সরকার উন্নয়ন কাজ শেষ করে প্রচারণায় সুবিধা নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। এজন্য শেষ সময়ে বড় এডিপি ও দৃশ্যমান প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ থাকে। এর মধ্যে নির্বাচনী বছরে এমপিদেরও বিভিন্ন চাহিদা থাকে। কারণ ভোটের আগে স্থানীয়দের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। এমপিদের প্রচারণার সুযোগ করে দিতে নির্বাচনী বছর হওয়ায় আগামী এডিপিতে গ্রাম থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কের প্রকল্পেও নজর দেয়া হয়েছে। প্রাধান্য পাচ্ছে বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনী বছরে কিছু বড় প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হলে অহেতুক অপচয়ের সম্ভাবনা থাকে। এ সময় সাধারণত বরাদ্দ বেশি দেয়া হয় উন্নয়ন সাফল্য দেখাতে। কাজ শেষ করতে না পারলেও, শুরু করেই জনগনকে বলা যায় সরকার কাজ করছে সুযোগ পেলে আরো বেশি করা হবে। তিনি বলেন, এটা অনেকটাই নির্বাচনে কাজে লাগে, প্রচারণায় সুবিধা পাওয়া যায়। তবে মানহীন বা কম গুরুত্বপূর্ণ বেশি প্রকল্প এডিপিতে না রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে বেশি নজর দেয়া ও প্রকল্পের গুনগত মানের দিকে খেয়াল রাখা উচিত।