বাস মালিক সমিতির স্বেচ্ছাচারিতায় শ্যামনগরগামী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ
শ্যামনগর প্রতিনিধি :
বাস মালিক সমিতির স্বেচ্ছাচারিতায় শ্যামনগরগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। আগে সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ঘণ্টায় একটি করে গেটলক সার্ভিস চললেও সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতি ও কালিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে বছর দেড়েক পূর্বে তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ তো দূরের কথা, শ্যামনগর পর্যন্তই সরাসরি যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ফলে সাতক্ষীরা থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দূরে শ্যামনগরে যেতে তিন ঘণ্টারও অধিক সময় লাগছে। এতে সবচেয়ে বেশি হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা সময়মত অফিস করতে পারছেন না। সময় মতো অফিসে পৌঁছুতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পরিবহনগুলোতে উঠলেও পথে পথে চেকের নামে যাত্রীদের হয়রানি করছে মালিক সমিতির লোকজন।
একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে লাইনের বাসে (খুলনা-কালিগঞ্জ) সাতক্ষীরা থেকে মাত্র ৩৪ কিলোমিটার দূরে কালিগঞ্জে যেতে সময় লাগে নূন্যতম ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। এই সড়কে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে বিরতিহীন বাস (যশোর-কালিগঞ্জ) রয়েছে। তাতে সময় লাগে ৫০ মিনিট। কিন্তু খুলনা-কালিগঞ্জ লাইনের বাস শ্রমিকরা সাধারণ যাত্রীদের যশোর-কালিগঞ্জের বিরতিহীনে উঠতে দিতে চায় না। ক্ষণে ক্ষণে যাত্রীদের হয়রানি ও লাঞ্ছিত করে বাস শ্রমিকরা।
অপরদিকে, সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতি ও কালিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে যাওয়া গেটলক সার্ভিস চালুর উদ্যোগ দেড় বছরেও গ্রহণ করেনি সাতক্ষীরা জেলা বাস মালিক সমিতি।
সময় বাঁচাতে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকালে ঢাকা থেকে আসা পরিবহনে উঠে শ্যামনগরে অথবা মুন্সীগঞ্জে যেতে চাইলেও তাদের পথে পথে বাধা দেওয়া হয়। লাঞ্ছিতও হতে হয় বাস মালিক সমিতির শ্রমিকদের হাতে। এতে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রী সাধারণ। শুধু পরিবহন নয়, লাইনের বাস বাদে সময় বাঁচাতে মাহিন্দ্রা কিংবা ভ্যানে উঠলেও পথে জোর করে নামিয়ে দেয় মালিক সমিতির শ্রমিকরা। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
মুন্সীগঞ্জে কর্মরত একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, বাস মালিক সমিতির শ্রমিকদের হাতে প্রতিদিন লাঞ্ছিত হচ্ছে মানুষ। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই। সাতক্ষীরা থেকে কালিগঞ্জে যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। কালিগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ যেতে সময় লাগে আরও ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। গেটলকে সময় লাগতো মাত্র ২ ঘণ্টা। দেড় বছর আগে বন্ধ হলেও তা চালু করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শ্যামনগরে কর্মরত উপজেলা পর্যায়ের এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, গেটলক নেই। তাই সকালে ঢাকা থেকে আসা বাসে উঠতাম। কিন্তু মালিক সমিতি পথে পথে চেক বসিয়ে তাতেও উঠতে দিচ্ছে না। সাধারণ যাত্রীদের চরমভাবে লাঞ্ছিতও করছে তারা। দেশটা যেন মগের মুল্লুক হয়ে গেছে।
কালিগঞ্জে কর্মরত এনজিও কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বলেন, আমি নিজের টাকা দিয়ে যাব। কিন্তু যশোরের বিরতিহীনে উঠতে দেয় না খুলনার বাসের শ্রমিকরা। এটা কি? এখানকার রাজনৈতিক নেতারা কি ঘুমায়?
ভুক্তভোগীরা সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে গেটলক সার্ভিস চালু ও পরিবহনে উঠতে বিদ্যমান শ্রমিক হয়রানি বন্ধে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
Please follow and like us: