সাতক্ষীরায় বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমন
নিজস্ব প্রতিনিধি:
ধান পাকার মুখে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার বোরো চাষি। ব্লাস্ট নামক এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আধা পাকা ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। ফলে যে সব কৃষক ঋন দেনা করে বোরো ধান চাষ করেছে তারা রীতিমত পথে নামতে বসেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ বলছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে মুলত বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিচ্ছে। তাদের দাবি দিনে গরম রাতে ঠান্ডা পড়ায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়াচ্ছে বোরো ধানে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাগবাটি গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান, মতিয়ার রহমান, পাশ্ববর্তী রইচপুর গ্রামের গোলাম হোসেন ও আবুল হাসান জানান, তারা প্রত্যেকই চলতি মৌসুমে ৫ থেকে ৬ বিঘা পরিমান জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। শুরু থেকে সবধরনের পরিচর্জাও করেছেন বোরো ক্ষেতে। এরমধ্যে সেচ, সার, বালাইনাষকসহ অন্যান্য কিটনাষক প্রয়োগ। এতে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেতের ধানও প্রায় আধা পাকা হয়ে গেছে। কিন্ত ৪/৫ দিন যাবত ধানের শীষ শুকিয়ে ভিতরে চিটা হয়ে যাচ্ছে। তারা আরো বলেন, প্রথমে দু‘একটি ধানের শীষে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পরদিন ক্ষেতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে জমির অধিকাংশ ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। কিন্ত স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার পরও তারা কোনো প্রতিকার পাইনি বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তার রঘুনাথ গুহ বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বণিক বার্তাকে জানান, বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার পর ওইসব গ্রামে পৌছে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে এটি দ্রুত কমে যাবে।
একই অবস্থা জেলার তালা উপজেলার বাইগুনি গ্রামের বোরো চাষিদের। এই গ্রামের বোরো চাষি শিবপদ দাশ জানান, চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে ব্রি-ধান ২৮ জাত চাষ করেন। তিনি আরো বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আধা পাকা ধান চিঠা হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতময়। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন তার বোরো ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই প্রান্তিক কৃষক। তিনি বলেন, ধার দেনা করে ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। কিন্ত ধান পাকার মুখে এই ব্লাস্ট দেখা দেয়ায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ উপজেলার বড়বিলা গ্রামের বোরো চাষি আব্দুল হকও জানান, তার ৪ বিঘা জমিরে বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে সরকারী ভাবে বোরো চাল উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে ৩ লাখ ২২৬ মেট্রিকটন। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাতে ৯৭ হাজার ৫১৭ টন, কলারোয়ায় ৪৮ হাজার ৪৮৫ টন, তালায় ৭৩ হাজার ৭৮ টন, দেবহাটায় ২৫ হাজার ১৮৯ টন, কালিগঞ্জে ২১ হাজার ৭৯৬ টন, আশাশুনিতে ২৭ হাজার ৫৪৪ টন এবং শ্যামনগরে ৬ হাজার ৭১৭ টন। এই লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরাতে সাড়ে ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী মো. আব্দুল মান্নান বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, যে সব এলাকা ব্লাস্ট রোগদেখা দিচ্ছে বোরো ক্ষেতে সাথে সাথেই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সেখানে পাঠিয়ে মরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই এটি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে। তবে এই ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার কারন হিসেবে তিনি আরো জানান, উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। এখানে দিনে গরম রাতে ঠান্ডা পড়ার কারনেই মুলত বোরো ক্ষেতে এই ব্লাস্ট দেখা দিচ্ছে। তবে রোগটি যাতে অতিসত্ত্বর নিয়ন্ত্রনে আসে সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের পক্ষ থেকে।