কিস্তির টাকা জোগাড় করতে মেধাবী বেলালের পড়াশোনা বন্ধ
ডেস্ক রিপোর্ট :
বগুড়ার নন্দীগ্রামে পিতার লোনের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেল মেধাবী বেলাল হোসেনের (১২) পড়াশোনা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের দলগাছা গ্রামে অত্যন্ত গরীব ঘরে জন্ম হয় বেলাল হোসেনের। মা-বাবা ও ছোট এক ভাই নিয়ে তাদের পরিবার। তার পিতা লুৎফর রহমান পেশায় একজন ভ্যান চালক।
পড়াশোনা করে ভাল একটি চাকরী করে সংসারের অভাব দূর করবে এ স্বপ্ন নিয়েই বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করে বেলাল। অভাব তাদের সংসারে নিত্য সঙ্গী। যার কারণে বেলাল শিশুকাল থেকে বিদ্যালয়ে আসার আগে ও পরে বিভিন্ন কাজ করে সংসারে অর্থিক সহায়তা করে। এভাবেই চলতে থাকে তার পড়াশোনা।
২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয় বেলাল। এরপর বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয় ভাটরা খাঁন চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে। মাত্র দু’মাস স্কুল করার পর বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশোনার স্বপ্ন।
স্থানীয়রা জানান, সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য বেলালের মা বিনা বেগম একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে বেলালের বাবা লুৎফর রহমানকে একটি অটোভ্যান কিনে দেন তিনি। এরপর একদিন সবার অজান্তে অটোভ্যানটি বিক্রয় করে গ্রাম ছাড়া হয় তার বাবা। খবরটি এনজিও কর্মকর্তারা জানার পর লোনের টাকা পরিশোধ করার জন্য বিনা বেগমকে চাপ দিলে দিশেহারা হয়ে পড়েন বেলালের মা।
পরে বেলাল কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য প্রতিদিন ১শ টাকা পারিশ্রমিকে চাকুরী নেয় উপজেলার শিমলা বাজারের একটি খাবার হোটেলে।
কথা হয় বেলাল হোসেনের সাথে। সে জানায়, পড়াশোনা কখনও বুড়ো হয় না। অভাবে পড়ে পড়াশোনা বন্ধ রেখেছি। বাবা সমিতি থেকে কিস্তি নিয়ে অটোভ্যান কিনে তা বিক্রয় করে এলাকা ছাড়া হয়েছে। সমিতির কিস্তির টাকা পরিশোধ করার সামর্থ নেই আমার মায়ের। তাই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হোটেলে চাকরি নিয়েছি। কিস্তির টাকা পরিশোধ হলেই হোটেলের চাকরী ছেড়ে আবার স্কুলে যাব। আমি পড়াশোনা শিখতে চাই।
তার মা বিনা বেগম জানান, সংসারে অভাব ও সমিতির কিস্তি পরিশোধের জন্য আমার ছেলে লেখাপড়া বন্ধ করে হোটেলে কাজ করছে। এখন মা-ছেলে মিলে কাজ করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করছি। আমার ছেলের লেখাপড়ার জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।
দলগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজম জানান, বেলাল প্রতি শ্রেণীতেই প্রথম স্থান অধিকার করতো। সে মেধাবী ছিল। আমি তার সফলতা কমনা করি।
Please follow and like us: