বিএনপির ৮ নেতাসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাব তলব
ডেস্ক রিপোর্ট:
১২৫ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিএনপির শীর্ষ ৮ নেতাসহ ১০ জনের লেনদেনের তথ্য জানতে সাত ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে। দুদকের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. সামছুল ইসলামের সই করা চিঠিতে অভিযোগ আনা ১০ জনের যাবতীয় হিসাবের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
যেসব ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ডাচ বাংলা, ন্যাশনাল, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আরব বাংলাদেশ ও ঢাকা ব্যাংক।
যে ১০ ব্যক্তির হিসাব তলব করা হয়েছে তারা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম মোর্শেদ খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল, এম মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
এর আগে ২ এপ্রিল আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ আটজনের বিরুদ্ধে ৩০ দিনে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২৫ কোটি টাকা লেনদেনসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার স্মারক নম্বর- ০৪.০১.০০০০.৫০৩.২৬.১৮.১০৫০৯। একই সঙ্গে অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
বিএনপির ওই নেতারা বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিদেশে টাকা পাচারসহ বিভিন্ন নাশকতার জন্য অর্থ লেনদেন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩০ দিনে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নাশকতার জন্যই এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিএনপির আট নেতার অ্যাকাউন্ট থেকে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
এর মধ্যে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর এইচএসবিসির অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি তিন চেকের মাধ্যমে মোট ১১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। তিনটিই ক্যাশ চেক। ৩ কোটি ৭৫ লাখ এবং ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার দুটি চেক ঢাকায় নগদায়ন করা হলেও তৃতীয় চেকটি উত্তোলন করা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে।
১৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদে দুটি চেকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এর একটি চেক নগদায়ন করা হয় কুমিল্লা থেকে।
২০ ফেব্রুয়ারি আব্দুল আউয়াল মিন্টু ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে তিনটি চেকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক নগদ করা হয় খুলনা থেকে।
২৫ ফেব্রুযারি আব্দুল আউয়াল মিন্টু এইচএসবিসি অ্যাকাউন্ট থেকে আবারো দুটি চেকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৬০ লাখ উত্তোলন করেন।
আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি তাবিথ আউয়ালের ন্যাশনাল ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলন করা হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২২ ফেব্রুয়ারি একই ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দুটি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকার মধ্যে ৩ কোটি ২৫ লাখ উত্তোলন করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে।
এদিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেতা মোর্শেদ খানের আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে চারটি চেকের মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে চারটি চেকের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা উত্তোলন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে।
২৬ ফেব্রুয়ারি মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খানের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৯ কোটি টাকা চারটি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন হয়।
গত ৩ মার্চ থেকে ১২ মার্চের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২টি চেকের মাধ্যমে ২১ কোটি টকা উত্তোলন করা হয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি মির্জা আব্বাসের ঢাকা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ কোটি ৫০ লাখ এবং ৪ মার্চ আরো ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা নগদায়ন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে মির্জা আব্বাস ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন অবৈধ লেনেদেসহ মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত।
অন্যদিকে নজরুল ইসলাম খান ও হাবিব-উন-নবী সোহেলের অ্যাকাউন্ট থেকে গত দুই সপ্তাহে ৭ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৪-১৫ সালে নাশকতা ও অরাজকতা সৃষ্টির আগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক ও নগদ অর্থ লেনদেনের ঠিক একইরকম তথ্য পাওয়া যায় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
Please follow and like us: