দেবহাটা উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন দেখতে ২য় দিন মেলায় উপছে পড়া ভীড়

মীর খায়রুল আলম,দেবহাটা:
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয় দেবহাটা উপজেলা। প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম ২০১৭ সালে এক বছরে এতবেশি উন্নয়ন ঘটেছে। পূর্বে যা এত দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। নানা ইতিহাস সম্বলিত উপজেলা দেবহাটা। এখানে একসময় ছিল জমিদারিত্ব। আজকের দিনে জমিদার না থাকলেও রয়েছে তাদের ধ্বংশ অবশেষ কিছু স্মৃতি। উপজেলাটি বহু আগে প্রতিষ্ঠা হলেও দীর্ঘ ৩৪ বছরে পরিষদের দৃর্শমান গেট গেইট নির্মান করা সম্ভব হয়নি। সেটি আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। প্রাচীনতম দেবহাটা উপজেলা সীমানা নির্ধারণ পুষ্পকাটি টু বেজর আটিতে দেবহাটা উপজেলার সীমানা নির্ধারক পিলার, সখিপুর মোড়ে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের অবস্থানের চিহ্ন নির্দেশক তথা ইনডিকেটর নির্মাাণ করা হয়েছে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অংশ ৯নং সেক্টরের অধীনে ছিল দেবহাটা। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের পুকুরের পাশবর্তী স্থানে তৈরী করা হয়েছে একটি মুক্তম । যেখানে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ম স্থ হচ্ছে। এতে অনেক সুবিধা বয়ে আনার সাথে বাড়তি খরচ কমিয়ে এনেছে বিভিন্ন প্রোগ্রামের। উপজেলা পরিষদ চত্তরকে সৌন্দর্য্য মন্ডিত করতে এসএস পাইপ দিয়ে চমৎকার ফুলের বাগান তৈরী হয়েছে। শুধু ফুলের বাগান নয় সাথে তৈরী করা হয়েছে ঔষধি বাগান, যাতে রয়েছে ১৮৮ ধরনের ঔষধি বৃক্ষ। প্রত্যেকটি গাছের সাথে তার নাম ও বৈজ্ঞানিক নাম লিখে দেয়া হয়েছে এবং এ বাগানের এক পাশে ১২২ ধরনের টক জাতীয় গাছ লাগানো হয়েছে। সরকারের স্বপ্ন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে ১০টি ভ্যান, ০৪ টি দোকান, ওজন মাপার মেশিন, সেলাই মেশিন, ৬টি গরু, ৩০টি ছাগল প্রদান এবং একজন ০৬ জন আশ্রয়হীন ভিক্ষুককে এক কক্ষ বিশিষ্ট ঘর নির্মান সম্পন্ন করা হয়েছে। ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ০২ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা গৃহ নির্মান করা হয়েছে। নির্মান হয়েছে ভূমি অফিসে সেবা গ্রহীতাদের বসার স্থান (কাছারি ঘর)। বর্তমানে সেবা গ্রহীতারা সেটি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সেবাগ্রহীতাদের জন্য প্রথম পাঁকা সাইকেল ও মোটরসাইকেল সেড নির্মান হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাজিরা প্রদানের জন্য ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা প্রায় প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদে এবং উপজেলা আবাসিক এলাকায় শিশু পার্কে বিনোদন প্রদানের লক্ষ্যে শিশুদের জন্য  ব্যালান্স, দোলনা, সিলিপার ইত্যাদি রয়েছে। সরকারি কর্মজীবী নারীদের বাচ্চাদের জন্য উপজেলা পরিষদে ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে আধুনিকায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শ্রেণি কক্ষে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি নতুন যোগ হয়েছে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা। পাঠদান ও সহজ পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন এবং ৬০ প্রাথমিক বিদ্যলয়ে ১৯ ইি  মনিটর, ১৬জিবি পেনড্রাইভ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি দপ্তর ও উপজেলা চত্বরে সিসি ক্যামেরা এবং ইন্টারকম স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। সাথে সাথে দেবহাটা উপজেলার দর্শনীয় স্থান রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র ও বনবিবির বটবৃক্ষ ঘিরে রয়েছে নানামূখি উদ্যোগ। তবে, ইতোমধ্যে ইছামতির তীরে গড়ে তোলা ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবনকে পরিপূর্ণরূপে সাজাতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। যার মধ্যে যাওয়া আসার জন্য ২টি ট্রেইল তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। দর্শনার্থীদের পর্যটন কেন্দ্রটির বিভিন্ন স্থানে বসার জন্য পাঁকা বে  তৈরী করাসহ পর্যটকদের বনের ভেতরে হাঁটার জন্য বাঁশ দিয়ে ট্রেইল তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে। পর্যাটন কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ ও সোলার প্যানেল সংযোগ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে পর্যটন কেন্দ্রটির পুকুরে পর্যটকদের জন্য একটি প্যাডেল নৌকা নামানো হয়েছে। এছাড়া, উপজেলার বসবাসরতদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সপ্তাহের একদিন গনশুনানির ব্যাবস্থা রয়েছে। বিগত একবছরে যার সংখ্যা ৯০ টি। পাশাপাশি যোগদানের সময় থেকে ৭৪ টি মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে। যার মধ্যে মাদক, জুয়া, নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধে ৫৭ টি। তাছাড়া বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বিরাজ করছে বলে উন্নয়ন মেলার তথ্যে জানাগেছে। তবে, এসব উন্নয়নের পিছনে বিশেষ অবদান রয়েছে নির্বাহী কর্মকর্তার। তিনি দেবহাটায় যোগদানের পর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এসব পরিবর্তন এসেছে। উন্নয়ন নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেবহাটা উপজেলা পরিবর্তনের ছোয়া লেগে উন্নত হচ্ছে। বর্তমান সরকার উন্নয়নমূখি হওয়ায় উল্লেখ যোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জেলার সবকটি উপজেলায় বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। কিন্তু দেবহাটায় না থাকায় অতিদ্রুত সেটিও চালু করা হবে। একই সাথে দেবহাটার বটবৃক্ষ (বনবিবিতলা) ও ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রকে দর্শকদের মনে স্থান করে নিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। উপজেলার শিক্ষা, চিকিৎসা, মৎস্য, কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তার নিজস্ব চিন্তা চেতনা স্বরূপ দেবহাটা উপজেলায় একটি হোমিও প্যাথিক কলেজ এবং অসহায়, দরিদ্র, আশ্রয়হীন এবং সহায় সম্বহীন ভিক্ষুকদেও জন্য আনন্দ আশ্রম গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এদিকে, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৩দিন ব্যাপী মেলার ২য় দিনে সাধারণ জ্ঞান, রচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান এবং সার্বিক উন্নয়ন দেখতে উপছে পড়া দর্শক ভীড় জমায়।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)