এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পুলিশ পরিচয়ে আটকের পর গুম
শহর প্রতিনিধি :
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে এমন অভিযোগে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটকের পর চোখ বেঁধে নির্যাতনের ২৪ ঘণ্টায়ও পুলিশ তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তা বলছে না। উপরন্তু তাকে আটক করা হয়নি বলে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার পুলিশ।
বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী মোড়লের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
মনোয়ারা বেগম বলেন, তার ছেলে নুরুল ওরফে গিয়াসউদ্দিন(৪৫) একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। স্থানীয় ঘের ব্যবসায়ী ও সাবেক উপজেলা বিএনপি’র নেতা একই গ্রামের সাত্তার মোড়ল ও তার শরীকদের সঙ্গে বিরোধ দীর্ঘ দিনের। ইতিপূর্বে নুরুলকে একটি হত্যা মামলায় জড়ানো হয়। যা আজো চলমান। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাবে নুরুলকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে আসছিলেন সাত্তার মোড়লসহ তার পক্ষের লোকজন।
তিনি জানান, বুধবার আনুমানিক দুপুর আড়াইটার দিকে কালিকাপুরের সাত্তার মোড়লের মালিকানাধীন শাওন ফিস এর সামনে থেকে গোয়ালঘোসিয়া নদীর চরে নিজের মাছের ঘেরে কাজ করার সময় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে এমন কথা বলে নুরুলকে আটক করে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হেকমত আলী, উপপরিদর্শক প্রকাশ ঘোষ, উপপরিদর্শক ইসরাফিল, উপপরিদর্শক মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক জাহিদ, উপপরিদর্শক সুজিত, সিপাহী সোহরাব ও সিপাহী ফিরোজসহ পুলিশের একটি দল। তারা নুরুলকে ঘেরের বাসা থেকে চোখে গামছা বেঁধে তুলে এনে শাওন ফিস এর মধ্যে নিয়ে আসে। সেখানে তাকে ওইসব পুলিশ সদস্যরা ব্যাপক নির্যাতন চালায়। নুরুল এর চিৎকারে তার ছেলে সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রনি (১৬) বাধা দেওয়ায় তাকে মারপিট করে মোবাইল কেড়ে নেন উপপরিদর্শক হেকমত আলী। পরে তাকে শতাধিক নারী ও পুরুষের সামনে পুলিশের ভ্যানে তুলে কালিগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। বিকেলে স্থানীয় বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকারকে নিয়ে তিনি ও তার দু’ ছেলেসহ স্বজনরা কালিগঞ্জ থানায় এলে নুরুলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্য ভাতের টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে থানা লক আপে আবস্থানকারি নুরুলকে দেওয়ার চেষ্টা করলে উপপরিদর্শক হেকমত আলী তা নিয়ে নেন। একপর্যায়ে শীতের বস্ত্র ও ভাত দিতে না পেরে রাত ১১টার দিকে তারা বাড়ি ফেরেন।
মেেনায়ারা বেগম অভিযোগ করেন বলেন, তারা থানা থেকে চলে আসার পর পুলিশ নুরুলের চোখ বেঁধে ব্যাপক মারপিট করার পর অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে রাতভর বিভিন্ন স্থানে ঘোরায় বলে তিনি একাধিক সূত্রে জানতে পারেন। সকালে তারা থানায় গেলে পুলিশ তাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। এমনকি তাকে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ নিয়ে গেছে বলে জানানো হয়। সেখানে যোগাযোগ করা হলে নুরুল সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না বলে জানানো হয়।
মনোয়ারা বেগম তার ছেলে নুরুলকে অস্ত্র উদ্ধারের নামে সাত্তার মোড়লের পরিকল্পনায় পুলিশ ক্রস ফায়ারের নাটক সাজিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি তার ছেলেকে সুস্থ ও জীবন্ত অবস্থায় ফিরে পাওয়া ও নির্যাতনের অভিযোগ কালিগঞ্জ থানার দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নুরুল মোড়লের ছেলে রনি ও তার চাচাত ভাই শামীম উজ্জামান।
জানতে চাইলে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্য্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে বহু লোকের সামনে নির্যাতন করে ধরে নিয়ে যাওয়া নুরুল সম্পর্কে পুলিশ জানে না এমনটি বলার সূযোগ নেই।
এ ব্যাপারে ঘের ব্যবসায়ি ব্যবসায়ি সাত্তার মোড়লের সঙ্গে বুধবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে তার ০১৭১১-৩৫৪৭২৯ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবীর দত্ত বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের কাছে নুরুলকে আটক ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন।#
Please follow and like us: