পাটকেলঘাটায় থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙ্গল হালের বলদ দিয়ে চাষাবাদ
বিশ্বজিৎ চক্রবর্তি ॥ পাটকেলঘাটা প্রতিনিধিঃ
বাঙালির ঐতিহ্য কাঠের লাঙল কালের বিবর্তনে পাটকেলঘাটা থেকে এখন প্রায় বিলুপ্তর পথে। চাষাবাদের অন্যতম উপকরণ হিসাবে কাঠের লাঙ্গল ছিল অপরিহার্য। এক সময় লাঙল ছাড়া গ্রাম বাংলায় চাষাবাদের কথা চিন্তাই করা যেত না। কলের লাঙল সে স্থান দখল করায় দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙ্গল। আগে পাটকেলঘাটা থানার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই কাঠের লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ করতে দেখা যেত। এখন আর চোখেই পড়ে না। এক সময় ক্ষেত খামারে কৃষক লাঙ্গল ও মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য সবার নজর কাড়তো। হাজার বছরের ঐতিহ্য চাষাবাদের বহুল ব্যবহারিত কাঠের হাতল ও লোহার ফাল বিশিষ্ট লাঙ্গল আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। আধুনিক যুগে চাষাবাদের যান্ত্রিক উপকরণ আবিষ্কারের ফলে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে , জোয়াল, মই ও হালের বলদ। এসবের ব্যবহার স্বল্প আয়ের কিছু সংখ্যাক কৃষক পরিবারে কোন রকমের টিকে থাকলেও ক্রমশ উৎকর্ষের যুগে কৃষিকাজে ঠাঁই করে নিয়েছে পাওয়ার ট্রলার ও ট্রাকক্টর। আগে দেখা যেত কাকডাকা ভোরে কৃষক গরু, লাঙ্গল, জোয়াল নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়তো। এখন আর চোখে পড়ে না গরুর লাঙল দিয়ে চাষাবাদ। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চলাচ্ছে চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে গরু দিয়ে হাল চাষ। এখন গ্রামগঞ্জের অনেকেই কালেরসাক্ষী লাঙ্গল। হাট-বাজারগুলোতে জোয়াল, মই ইত্যাদি সরঞ্জামের পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা যায় না। যারা এ গুলোকে পেশা হিসেবে নিয়ে তৈরি করতেন তাদেরও অনেকেই এখন বেকার। গরু দিয়ে হাল চাষ করতে আশা চোমরখালী এলাকার নজরুল ইসলাম নজু (৬০) বলেন, ছোটবেলায় হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু ছিল ২-৩ জোড়া। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠ লোহার তৈরি লাঙল, জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি। আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো। অনেক সময় গরুর গোবর জমিতে পড়ত, এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো ক্ষেতে ফলন ভালো হতো। পর্যাপ্ত ক্ষেত খামার না থাকায় এবং চাষ জমি বাদ দিয়ে ঘের করার কারণে এটি আজ বিলুপ্তির পথে বলে মনে করছেন সাধারণ চাষিরা।
Please follow and like us: