একুশে পদক প্রাপ্ত চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ছিলেন আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
একুশে পদকজয়ী শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের সাবেক পরিচালক বাংলাদেশের চিত্রকলা আন্দোলনের পঞ্চাশ দশকের খ্যাতিমান   চিত্র শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর এর ৮৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর আলোচনা অনুষ্ঠানে তাঁর সৃষ্টিকর্মের  বিষয় স্মৃতিচারনে প্রধান অতিথি সাতক্ষীরা ০১ আসনের মাননীয় সাংসদ এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর তালার সন্তান এ জন্য আমরা গর্বিত। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে চিত্র শিল্প কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করিয়েছেন বাংলাদেশকে।তিনি আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী রাষ্ট্রীয় ভাবে পালনের দাবি জানান।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায়  সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন
কোন জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা সে জাতির শিল্প  সাহিত্য ও সংস্কৃতির আশ্রয়ে বেঁচে থাকে।
একটা পরিপূর্ণ দর্পনে যেমন আমাদের পূর্ণাঙ্গ মুখচ্ছবি প্রতিফলিত হয়, তেমনি শিল্প  সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে একটি জাতির পরিপূর্ণ-বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন চিত্র ফুটে উঠে।কালে কালে মানুষের প্রয়োজনে সমাজের চাহিদা অনুসারে নিত্য-নতুন আঙ্গিকে এর ধারা আবিষ্কার হতে থাকবে এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। যুগে যুগে সমাজ রাষ্ট্র ও জাতির জন্যে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী মনীষী বিভিন্ন বিষয়ে শিল্প  সাহিত্য রচনা করেছেন।যে জাতির সংস্কৃতি যত বেশি সমৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে, বিশেষ অতিথি হিসেবে স্মৃতি চারন করেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ দিদার বখত, সাবেক অতিরিক্ত সচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ শাফি আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক  শিল্পী শেখ আফজাল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার ও প্রয়াত শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর এর ভ্রাতুষ্পুত্র,সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র,শারমিন আকবর হাশেমী, সৈয়দ জুনায়েদ আকবর,  সাংবাদিক সৈয়দ মহিউদ্দীন হাশেমী প্রমুখ। আলোচনায় তার কর্মজীবনের নানা দিক তুলে ধরে আলোচকবৃন্দ বলেন শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তাঁর হাত দিয়েই চালু হয় শিল্পকলা একাডেমিতে চারুকলা বিভাগ।দক্ষিণঅঞ্চালের একমাত্র আর্ট কলেজ খুলনা আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠায় ছিল তার অনন্য ভুমিকা। যা বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট। এছাড়া তিনি তার কর্মজীবনে শিল্পকলা একাডেমির দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক  এশিয়ান চিত্রকলা প্রদর্শনী শুরু করেন। তার উদ্যোগে জেলা উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজনও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর তাঁর ক্যানভাসে তুলে এনেছেন গ্রাম বাংলার প্রকৃতি ও সাধারণত মানুষের জীবন যাত্রা, নির্মাণ শৈলীতে ছিল বিচিত্র ব্যাঞ্জনা যা তাঁর সৃষ্টিকে করে তুলেছে  বৈশিষ্ট্যময়। তিনি ছিলেন প্রকৃতি ও নিসর্গ নির্ভর সম-বাস্তববাদী শিল্পী।
মূর্ত ও বিমূর্ত উভয় ক্ষেত্রেই রেখেছেন  সাফল্যের স্বাক্ষর।তাঁর এই ভিন্নধর্মী শিল্পকর্মের কারনে তিনি হয়ে উঠেছেন সমসাময়িক শিল্পীদের একজন।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর ১৯৩৫ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন  সাতক্ষীরা মহাকুমার তালা থানার তেঁতুলিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত হাশেমী পরিবারে জন্ম গ্রহণ  করেন। তাঁর সৃষ্টিশীল শিল্পী প্রতিভার কারনে   ১৯৮৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯২ সালে চারুশিল্পী সংসদ তাঁকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। ২০০০ সালে মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার এবং ২০০৫ সালে শশীভূষণ সম্মাননা সহ অন্যান্য সম্মাননায় ভূষিত হন।২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইকবাল রোডের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর।#
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)