খলিশাখালি ভূমিহীন পল্লীতে অগ্নিসংযোগ ও একের পর এক মামলার ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার দেবহাটায় সহ¯্রাধিক বিঘা জমির মৎস্য ঘের বেষ্টিত খলিশাখালি নামক জনপদ দখলের পর সেখানে গড়ে ওঠা ভূমিহীন পল্লীতে রাতের আঁধারে অগ্নিসংযোগ ও নীরিহ ভূমিহীনদের নামে একের পর এক মামলা দায়েরের ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ভূমিহীনেরা। রবিবার বেলা ১২টার দিকে খলিশাখালি জনপদে উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
শতশত নারী-পুরুষের স্বতষ্ফূর্ত অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তৃতাকালে ভূমিহীনদের পক্ষে হরিপদ স্বর্ণকারের ছেলে সুনিল স্বর্ণকার বলেন, দেশ বিভাগের আগে গাতীদার চন্ডিচরণ ঘোষের প্রজা ছিলেন তার পূর্ব পুরুষেরা। চন্ডীচরণ ঘোষ স্থায়ীভাবে ভারতে চলে যাওয়ার সময় খলিশাখালির ওই সম্পত্তি তার প্রজাদের নামে ডিএস কোবলা, পাট্টা দলিল করে দেন। পরে সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস শুরু করেন তৎকালীন প্রজারা। ১৯৫২ সালে সুরেন চৌধুরী নামের এক ব্যাক্তির কাছ থেকে শিমুলিয়া গ্রামের কাজী আব্দুল মালেক কিছু জমি বিনিময় করেন। তাছাড়া আরোও কিছু জমি লীজ নিয়েছেন দাবী করে ভারতে পাড়ি জমানো চন্ডীচরণ ঘোষের ফেলে যাওয়া ওই সম্পত্তি দখলে নিয়ে প্রজাদের উচ্ছেদ করেন মালেক কাজী ও তার লোকজন।
পরে ডিএস ও সিএস রেকর্ডের বুনিয়াদ কাগজপত্র জালিয়াতি এবং তৎকালীন ভূমি জরিপ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মালেক কাজী সহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা নিজেদের নামে ওই জমির এস এ রেকর্ড করিয়ে নেয়। যা পরবর্তীতে প্রিন্ট পর্চায় প্রকাশিত এবং পর্যায়ক্রমে তাদের উত্তরসূরী প্রায় তিন’শ জনের নামে গেজেটভুক্ত হয়। সেখান থেকেই কাজী আব্দুল মালেকের উত্তরসূরীসহ ক্রয়-বিক্রয় সূত্রে অপরাপর মালিকানা প্রাপ্ত ওইসব প্রভাবশারীরা খলিশাখালির গোটা সম্পত্তি ভোগদখল এবং সেখানে মৎস্য ঘের করে আসছিলেন।
সুনীল স্বর্ণকার আরো বলেন, তৎকালীন প্রজাদের উত্তরসূরী হওয়া স্বত্ত্বেও ন্যায্য অধিকার থেকে যুগ যুগ ধরে আমরা বঞ্চিত হয়ে আসছিলাম এবং আমাদের প্রাপ্য জমি ওইসব প্রভাবশালীরা জালিয়াতির মাধ্যমে ভোগদখল করে কোটিপতি বনে গিয়েছিল। সর্বশেষ আমরা উচ্চ আদালত ও নিন্ম আদালতে এসংক্রান্তে মামলা দায়ের করলে শুনানীতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে ওই সম্পত্তি আইনানুযায়ী কন্ট্রোল ও ম্যানেজমেন্টের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর আমরা তৎকালীন প্রজাদের উত্তরসূরীসহ শত শত ভূমিহীন পরিবার ঐক্যবদ্ধ ভাবে ওই সম্পত্তির দখল নিয়েছি।
বক্তৃতাকালে তিনি আরোও বলেন, খলিশাখালি দখলে নেয়ার পর থেকে আমাদের নীরিহ পরিবার গুলোকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দখলচ্যুত প্রভাবশালীরা। তারা মুহুমুহু আমাদের ওপর হামলা ও হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার আদালতে একটি এবং দেবহাটা থানায় অপর আরেকটি মামলাও দিয়েছে দখলচ্যুতরা। তাতেও আমাদের উচ্ছেদ করতে না পেরে গত বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিয়ে তাদের পাঠানো ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা খলিশাখালি জনপদের ৭/৮টি ভূমিহীন পরিবারের ঝুপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ এবং দুজন ভূমিহীনকে অতর্কিত মারপিট করে মোটর বাইকে চড়ে পালিয়ে যায়।
দখলচ্যুতদের চলমান হুমকি, অগ্নিসংযোগ এবং একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে ওই সম্পত্তি সরকারী আইনানুযায়ী খাস খতিয়ানে অর্ন্তভূক্ত করে তা প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়ার উদ্যোগ গ্রহনের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী জানান প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত শতশত ভূমিহীন নারী পুরুষেরা।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)