রাতের আঁধারে খলিশাখালির ঝুপড়ি ঘরে আগুন

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় সহস্রাধিক বিঘা জমি ও মৎস্য ঘের দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে দখলকৃত ওই গোটা খলিশাখালি জুড়ে। বিগত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে খলিশাখালি নামক ওই সহস্রাধিক বিঘা জমি ভোগদখল এবং সেখানে মৎস্য ঘের করে আসছিল উপজেলার বহু প্রভাবশালী ও ধর্ণাঢ্য ব্যাক্তিরা। গত ১১ সেপ্টেম্বর ভোররাতে ভূমিহীনদের ব্যানারে গোটা জমির দখল নেন শত শত পরিবার। মুলত সেখান থেকেই বর্তমানে অবস্থানরত ভূমিহীন এবং দখলচ্যুত মালিক পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে খলিশাখালি জনপদে। এঘটনায় এপর্যন্ত সেখানে অবস্থানরত ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে সহ পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেছেন দখলচ্যুত মালিকপক্ষরা। যারমধ্যে আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি সাতক্ষীরার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এবং আদালতের নির্দেশে দেবহাটা থানায় দায়েরকৃত অপর মামলাটি স্থানীয় থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
এদিকে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বৃহষ্পতিবার রাতে খলিশাখালিতে অবস্থানরত ৭টি ভূমিহীন পরিবারের ঝুপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিসংযোগের এ ঘটনা নিয়েও একে অপরের দিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের তীর ছুড়ছে সেখানে অবস্থানরত ভূমিহীন এবং সদ্য দখলচ্যুত মালিক পক্ষরা।
ভূমিহীনদের পক্ষে রবিউল ইসলাম বলেন, দখলের পর থেকে বিস্তৃর্ণ ও মৎস্য ঘেরের চারপাশের রাস্তার ধারে বাঁশ, কঞ্চি ও খড় দিয়ে আলাদা আলাদা ঝুপড়ি ঘর বেধে তাতে বসবাস করে আসছে সেখানে অবস্থানরত ভূমিহীনেরা। বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে খলিশাখালির দক্ষিন পাশের রাস্তা ধরে অতর্কিত ১৭/১৮ টি মোটর বাইক ওই জনপদে ঢুকে পড়ে। প্রত্যেকটি বাইকে একজন চালক ও আরেকজন আরোহী ছিল। তারা দেবীশহর অথবা গাজীরহাট থেকে বাইকে করে বাবুরাবাদ-বদরতলা কার্পেটিং সড়ক ধরে খলিশাখালিতে ঢুকেছিল। এসব দূর্বৃত্তরা তড়িঘড়ি করে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা ভূমিহীন ফরিদুল, আইয়ুব হোসেন, আব্বাস আলী, ওয়াহেদ, কামরুল, কালাম ও আকলিমার ঝুপড়ি ঘরে দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ভূমিহীন ইউসুফ ও মোমেনা বাঁধা দিতে গেলে তাদের উভয়কে মারপিট করতে থাকে দূর্বৃত্তরা। আহতদের চিৎকার শুনে অন্যান্য ভূমিহীনেরা ঘটনাস্থলের দিকে যেতে শুরু করলে ওইসব দূর্বৃত্তরা দ্রুত বাইকে চড়ে পালিয়ে যায়।
রবিউল আরো বলেন, দখলচ্যুত প্রভাবশালীরা একাধিক মামলা করেও ভূমিহীনদের হটাতে না পেরে সেখানে অগ্নিসংযোগ করিয়েছে বলে তাদের ধারণা।
এদিকে দখলচ্যুত মালিকদের পক্ষে শিমুলিয়ার কাজী সুরুজ ওয়ারেশ এবং আইডিয়াল পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমরা আমাদের রেকর্ডীয় জমি থেকে দখলচ্যুত অবস্থায় আছি। আমাদের সেখানে গিয়ে অগ্নিসংযোগ করার কোন সুযোগ নেই। কেননা সেখানে একাধিক লাঠিয়াল বাহিনী, ভূমিদস্যু বাহিনী এবং জেলা ও জেলার বাইরের কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে। আমরা সেখানে গেলে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা হানাহানি বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে আদালতে ও থানায় মামলা করেছি।
রাতের আঁধারে খলিশাখালি জনপদের ভূমিহীন ঝুপড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিষয়ে দেবহাটা থানার নবাগত ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, বুধবার দুপুরে সিনিয়র অফিসারদের নেতৃত্বে আমি সহ পুলিশের একটি দল খলিশাখালিতে গিয়েছিলাম। সেখানে রাস্তার পাশদিয়ে যে ঝপড়ি ঘরগুলো আমরা দেখেছি, তারমধ্যে অধিকাংশই বসবাসের অনুপযোগী। হয়তো সেখানে অবস্থানরতরা কিংবা প্রতিপক্ষরা এধরনের নোংরা খেলা খেলতে পারে। তবে এবিষয়ে এখনও আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবুও যেহেতু বিষয়টি আমি জেনেছি, সেহেতু পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটু দেরীতে হলেও খলিশাখালি ইস্যু সমাধান হবে বলেও জানান ওসি।

উল্লেখ্য, প্রথম দিকে বিনিময় সূত্রে ওই জমির মালিকানা শিমুলিয়া গ্রামের সুরুজ কাজীর দাদা কাজী আব্দুল মালেকের নামে থাকলেও পরবর্তীতে ওয়ারেশ সূত্রে ও ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে জমির বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা মালিকদের নামে এসএ রেকর্ড থেকে শুরু করে প্রিন্ট পর্চায় বিএস রেকর্ড পর্যন্ত গেজেটভুক্ত হয়েছে বলে দাবী দখলচ্যুত মালিকপক্ষের।
অপরদিকে অবস্থানরত ভূমিহীনদের দাবী, সিএস মালিক গাতিদার চন্ডীচরণ ঘোষ খলিশাখালির সমুদয় সম্পত্তি তার কয়েকজন প্রজাদের নামে কোবলা দলিল করে দিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এদেশে ফিরে না আসায় গোটা সম্পত্তি ওইসব প্রজাদের উত্তরসূরীদের প্রাপ্য হবে কিংবা সরকারের অনুকূলে থাকবে। কিন্তু দখলচ্যুত প্রভাবশালীরা জালিয়াতি করে ওই সমুদয় সম্পত্তির আইন বহিভূত কাগজপত্র বানিয়ে যুগযুগ ধরে তা ভোগদখল করে আসায় সম্প্রতি শতশত পরিবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা দখল করে নিয়েছেন বলেও জানান ভূমিহীনরা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)