সাতক্ষীরা থেকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে সারাদিন মাইক্রো-বাস চলাচল,করোনার ঝুঁকি চরমে

শহর প্রতিনিধি :
মহামারি করোনার ক্রান্তিকালে স্বাস্থ্যবিধিকে থোড়াই কেয়ার করে গাদাগাদি যাত্রী নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে খুলনায় চলাচল করছে মাইক্রোবাস। সাতক্ষীরা পোস্ট অফিস মোড় থেকে ভোর ৬টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা অবধি চলে যাত্রী উঠা-নামা। শহরের ব্যস্ততম জায়গায় প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অরাজকতা চললেও ব্যবস্থা না নেয়ায় উদ্বিগ্ন সচেতন মহল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে সকাল থেকেই শুরু হয় খুলনাগামী যাত্রীদের আনাগোনা। সকাল সাড়ে ছয়টায় প্রথম মাইক্রোবাস ছাড়ে এখান থেকে। দশ সিটের মাইক্রোবাসে তোলা হয় ১৪/১৫ জন যাত্রী। ভাড়া নেয়া হয় ২শ’ টাকা। জেলায় বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও বন্ধ হয়নি পোস্ট অফিস মোড়ের মাইক্রোবাস। এটাকে তাই অনেকে বিকল্প টার্মিনাল বলেও সম্বোধন করেন।

সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর বারোটা পর্যন্ত আধাঘন্টা অন্তর খুলনাগামী যাত্রীদের বহন করা হয়। বারো থেকে চৌদ্দটি মাইক্রোবাস এভাবেই প্রতিদিন সকাল থেকে ১৪ থেকে ১৫জন যাত্রী নিয়ে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে যায়। দুপুরের পর খুলনার শিববাড়ি মোড় থেকে আবারো শুরু হয় সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসগুলোর যাত্রা। বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চলে সাতক্ষীরাগামী যাত্রীদের উঠানো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাস মালিক জানান,মিনি বাসের মত মাইক্রোবাসে এভাবে যাত্রী বহন কোনভাবে বৈধ নয়। কারণ সরকারি রাস্তা গণপরিবহনে ব্যবহার করতে রুটপারমিশনসহ আনুসঙ্গিক অনেক কিছুই অনুমতির দরকার হয়। এছাড়া করোনা মহামারির সময়ে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যে কিভাবে সম্ভব,প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সাতক্ষীরা-বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ্য আবু নাসের জানান,একটি বাস রোডে তুলতে গেলে রুট পারমিট বাবদ প্রতিবছর ৯শ’ টাকা,৮ হাজার ৫শ’ টাকা ট্যাক্স,৫ হাজার টাকা আয়কর ও ফিটনেস বাবদ ১ হাজার ৭ শ’ টাকা দিতে হয়। অথচ সরকারের কোন অনুমোদন ছাড়াই পোস্ট অফিস মোড় থেকে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক মাইক্রোবাস খুলনায় যাতায়াত করছে। বর্তমানে বাস চলছে না। কিন্তু যখন বাস চলতো,তখনও বাসের বিকল্প হিসেবে আলাদাভাবে একটা প্লাটফর্ম দাড় করানো হয়েছিল পোস্ট অফিস মোড়ে।

সম্পুন্ন অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাইক্রোবাস কিভাবে চলছে,প্রশ্ন করা হলে মাইক্রোবাসগুলোর পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন,ভাই,খুলনা রোড মোড়সহ সব জায়গায় মাহেন্দ্র যেভাবে গাদাগাদি করে যাত্রীবহন করছে,সেদিকে তাকান না কেন? করোনা মহামারির মধ্যে গাদাগাদি করে যাত্রীবহন করা হচ্ছে,এমন প্রশ্ন শুনে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন জাহাঙ্গীর।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর কামরুজ্জামান বকুল বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের অবৈধ মাইক্রোবাস পরিচালনার বিষয়ে এসপি স্যারের নির্দেশনা পেয়েছি। ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাতক্ষীরা জেলা বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন,আইনশৃঙ্খলা সমম্বয় কমিটির সভায় খুলনাগামী ভিসাপ্রার্থী যাত্রীদের নিয়ে ২টা মাইক্রোবাস চালানোর অনুমতি ছিল। তবে এখন সাতক্ষীরায় ভিসা সেন্টার হওয়ায় ওই অনুমোদনের কোন বৈধতা থাকেনা।

পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,করোনাকালিন সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। এছাড়া অবৈধভাবে কোনকিছু পরিচালনা করার সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান পুলিশ সুপার।

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারি নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কাউকেই চলতে দেয়া হবেনা। নির্দেশনা অমান্যকারিদের সংক্রমণ নিরোধ আইন অনুযায়ী সাঁজা প্রদান করা হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা সমম্বয় কমিটির সভায় খুলনাগামী ভিসাপ্রার্থী যাত্রীদের নিয়ে ২টা মাইক্রোবাস চালানোর অনুমতি ছিল কিনা জানা নেই বলে জানান জেলা প্রশাসক।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)