নলতায় প্রতিবন্ধী স্কুলের আজহারুলের বিরুদ্ধে দূদকের তদন্ত শুরু

তরিকুল ইসলাম লাভলুঃ

কালিগঞ্জের বহুল আলোচিত এম,জে,এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দূর্নীতিবাজ আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার সময় দূর্নীতি দমন কমিশনে ৯৯/২০২০ অভিযোগের ভিত্তিতে দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সাতক্ষীরা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মিজানুর রহমান কালিগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাুমন এবং জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের রেজিষ্ট্রেশন অফিসার জামাল উদ্দীন দিনভর ভাড়াশিমলায় অবস্থিত এমজেএফ বিশেষ প্রতিবন্দী স্কুল মিলনায়তনে তদন্ত কাজ শুরু করেন।

ঐসময় অভিযুক্ত দূর্নীতিবাজ আজহারুল সেখানে হাজির না হওয়ায় তার নবনির্মিত মাঘুরালীতে একই সাইন্ডবোডে নির্মিত এমজেএফ প্রতিবন্দী স্কুলে যেয়ে তদন্ত সম্পন্ন করেন। তদন্তের সময় ভুক্তভোগী শিক্ষক কর্মচারীরা ছাড়াও এলাকার সুধী, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও নানা শ্রেনী পেশার মানুষ আজাহারুলের বিরুদ্ধে দূর্নীতির ফিরিস্থি তুলে ধরেন এবং তাকে আইনের আওতায় এনে গ্রেপ্তারের দাবী জানান। এপর্যন্ত দূর্নীতিবাজ আজহারুলের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক , জেলা পুলিশ সুপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা অফিসার ইনচার্জ সহ বিভিন্ন দপ্তরে ভুক্তভোগী শিক্ষক কর্মচারী ও এলাকাবীস অভিযোগ দিলেও একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের ইন্ধনে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে গেলেও তার টিকেটাও ছুতে পারেনি।  প্রতারক আজহারুল ইসলাম প্রথমে ২০০৮ সালে কাজলা গ্রামে একটি খুপড়ী ঘরের মধ্যে হতে এম জে এফ ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে চালিয়ে আসছিল। পরে ২০১০ সালে নলতা চৌমুহনী মোড়ে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে এম জে এফ ফান্ডেশনের পাশাপাশি এম জে এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। এবং অত্র স্কুলের নাম ভাঙ্গিয়া এবং প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার করে উপজেলা তথা জেলা জুড়ে বিভিন্ন ধন্যাঢ্য ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের নিকট হতে সাহায্যের নামে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে নিজে আত্মসাত করে আসছিল। পরে ২০১৬ সালে কুকাডাঙ্গার মোড়ে এলাকার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ নজরুল ইসলামের নিকট হইতে বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুলের নাম করে জমি কেনার জন্য ৬লক্ষ টাকা গ্রহন করে ৩লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ১৫ শতক জমি ক্রয় করলেও উক্ত জমি এম জে এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুলের নামে ক্রয় না করে তার নিজ প্রতিষ্ঠান এম জে এফ ফাউন্ডেশনের নামে দলিল সম্পাদন করে।

এর পরে ভবন নির্মান করার জন্য ডাঃ নজরুল ইসলামের নিকট হতে আরও ৬ লক্ষ টাকা এবং ১৫ হাজার ইট গ্রহন করে। পরবর্তীতে অত্র প্রতিবন্ধী স্কুলের ১৬জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার নাম করে প্রত্যেকের নিকট হতে আড়াই লক্ষ টাকা করে প্রায় ৪০ লক্ষ গ্রহন করে এম জে এফ ফাউন্ডেশনের ভবন তৈরী করে। বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পরে স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবক বৃন্দ ফুসে ওঠে।

এছাড়াও অত্র স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের সরকারী অনুদানের টাকা এবং সামগ্রী সে নিজে আত্নসাত করে।

এছাড়াও অত্র স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে গ্রামে গ্রামে ভবন তৈরীর নামে বাঁশ কালেকশন করে উক্ত বাঁশ প্রতিটি সাড়ে ৫’শ টাকা মুল্য নির্ধারন করে সমূদয় বাঁশের মুল্য পরিমান টাকা সে নিজে আতœসাত করে। এছাড়াও কর্মসৃজন প্রকল্পের লোক দিয়ে মাটির কাজ করালেও উক্ত কর্মসৃজন প্রকল্পের লোকদের মুজুরী হিসাব করে প্রায় ৩লক্ষাধিক টাকা আতœসাত করে। এই ভাবে উপজেলা জুড়ে সাহায্যের নাম করে প্রতিবন্ধীদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় কোটি টাকা আতœসাত করে নিজে নলতায় জমি ক্রয় করে ২তলা আলিশান বাড়ি বানালেও আজ অবধি অত্র স্কুলের শিক্ষক, কর্মচারীরা বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। অথচ ঠক, প্রতারক আজহারুল ইসলাম নিজে পরিচালক সেজে ২৪ লক্ষ টাকা বেতন ভাতা গ্রহন করেছে।

বিষয়টি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও আজ পর্যন্ত তার প্রতি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন না করায় ফুসে উঠসে এলাকাবাসী। তার দূর্নীতির বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় এমজেএফ ফাউন্ডেশনের নামে ক্রয়কৃত জমি এম জে এফ বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুলের নামে লিখে দেওয়ার নাম করে নানা প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে আজও পালিয়ে পালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সমাজ সেবা কর্মকর্তা তদন্ত করে তার সত্যতা মিললেও তার বিরুদ্ধে আজও কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। বর্তমান এমজেএফ বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুল টি প্রতিবন্ধী হয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমান তার দূর্নীতি ঢাকতে এমজেএফ বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুল নামে আরেকটি নতুন সাইন বোর্ডে নলতার মাঘুরালীতে স্থানীয় সংসদ সদস্যর  নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড টানিয়ে চুপিসারে স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে ভাড়াশিমলায় অবস্থিত এম জে বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুলের টিনসেট ভবনের বিভিন্ন জিনিস পত্র রাতের আধারে চুরির অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান স্কুলটি সরকারী অনুমোদনের জন্য সমাজ সেবা মন্ত্রনালয়ে কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন থাকলেও সেটাকে বাধা গ্রস্থ করতে ধুরন্দর চাঁদাবাজ দূর্নীতিবাজ আজহারুল মাঘুরালীতে নতুন এক সাইনবোর্ড টানিয়ে নতুন ধান্দা শুরু করেছে। এদিকে দীর্ঘদিন স্কুলে বিনা বেতনে বেকার দেওয়া শিক্ষকরা আজহারুলের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবী করেছে।

তদন্ত প্রসঙ্গে তদন্ত দলের প্রধান সাতক্ষীরা জেলা সমাজ সেবা অফিসের উপ পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন তদন্ত শুরু হয়েছে আগামী দু এক দিনের মধ্যে সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উৎঘাটন করে দূর্নীতি দমন কমিশনকে লিখিত ভাবে জানাবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)